শরীয়তপুরের ডামুড্যা থেকে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায়ের সময় জনতার হাতে চার অপহরণকারী আটক হয়েছে। আটককৃত ব্যক্তিদের মধ্যে তিন জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ডামুড্যা বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জুয়েল সরদার (৩২) ও ফয়সাল সরদারকে (২৪) অপহরণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় চার জনকে আটক করে গণপিটুনি দেয় জনতা। পুলিশ পাহারায় তাদের শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে।
আটককৃত ব্যক্তিরা হলেন—বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার গারফা এলাকার কৌশিক আহমেদ সেতু (৩০), শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার কাউসার তালুকদার (২৯), মাগুরা জেলার রুবায়েত মীর (২৭) ও কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার আমৌদা এলাকার শরীফ হোসেন (৩৫)। এদের মধ্যে কৌশিক, কাউসার ও রুবায়েত মীর পুলিশ কনস্টেবল। ঐ তিন পুলিশ সদস্যের মধ্যে রুবায়েত মীর চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য এবং কৌশিক ও কাউসার বর্তমানে কর্মরত আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম।
পুলিশ ও ডামুড্যা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি এলাকার মোহাম্মদ জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার ডামুড্যা বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ঐ দুই ব্যবসায়ী বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডামুড্যার দারুল আমান বাজার এলাকায় গেলে কয়েক জন লোক ঐ দুই ব্যবসায়ীকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। তারা ঐ দুই ব্যবসায়ীর কাছে সারা দিনের বিক্রি করা টাকা চান। তখন তাদের কাছে টাকা না থাকায় তারা অপহরণকারীদের তা দিতে পারেননি। তখন অপহরণকারীরা তাদের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা চান। ঐ ব্যবসায়ীরা ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। পরে অপহরণকারীরা ঐ দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের লেকের পাড়ে যান। সেখানে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে অপহরণ চক্রকে ঐ ব্যবসায়ীরা ৪ লাখ টাকা দেন। বাকি ৬ লাখ টাকা আদায় করার জন্য রাত ১টার দিকে ঐ চক্র ব্যবসায়ীদের নিয়ে ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান। সেখানে যাওয়ার পর ঐ দুই ব্যবসায়ী গাড়ি থেকে চিত্কার-চ্যাঁচামেচি করলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তখন স্থানীয়রা ডাকাত বলে চিত্কার দেয়। তখন তারা গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। স্থানীয় জনতা তখন চার জনকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। এরপর ডামুড্যা থানার পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করেন। ঐ গাড়িতে থাকা আরো চার অপহরণকারী পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে জয় পোদ্দার নামে আরেক পুলিশ সদস্য ছিলেন। তিনি পালিয়ে গেছেন।
আটক হওয়ার পর অপহরণকারী দলের সদস্য রুবায়েত মীর বলেন, ‘কাউসার তালুকদার আমাদের এখানে এনেছেন। তিনি হচ্ছে এই মিশনে আমাদের বস। অপহরণের সময় যে টাকা পেয়েছিলাম, তা কাউসারের কাছে। আমি আর কিছু জানি না।’
ভুক্তভোগী ঐ দুই ব্যবসায়ী ফয়সাল ও জুয়েল বলেন, ‘অপহরণের পর পিস্তল ঠেকিয়ে তারা বলেন, তোরা তো বড় ব্যবসায়ী, তোদের টাকা কই। যদি বাঁচতে চাস, আমাদের ২০ লাখ টাকা দিবি। আমরা পুলিশের লোক। পরে আমরা ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হই। তবু আমাদের লোহার রড দিয়ে পেটায়, কিল-ঘুসি মারে। বিভিন্ন মাধ্যমে, পরিবার থেকে এনে তাদের ৪ লাখ টাকা দিই। তার পরও আমাদের ছাড়ছিল না। পরে বাকি ৬ লাখ টাকার জন্য অপহরণকারীরা ডামুড্যা শহরের বাসস্ট্যান্ডে আসেন। স্থানীয় জনতার সহায়তায় সেখানে আমরা মুক্ত হই।’
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঐ চক্রের আটক চার জনের মধ্যে তিন জন পুলিশ সদস্য বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। আর পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। তাদের বিষয় খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’