শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

মৃত্যুর আগে ১২ ঘণ্টা অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন মারাদোনা 

আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৫, ১১:০৫

২৫ নভেম্বর ২০২০ সালে না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনা। তার মৃত্যু দাগ কেটেছে বিশ্বের কোটি ফুটবল ভক্তের হৃদয়ে। মৃত্যুর সাড়ে চার বছর হয়ে গেলেও এখন ধোঁয়াশা কাটেনি তার মৃত্যু নিয়ে। তার ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে তার মৃত্যু নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। এটি সাধারণ মৃত্যু, নাকি পরিকল্পিত হত্যা সেটা প্রমাণ হতে মামলা চলছে আদালতে। সেখানে প্রায় প্রতিদিনই এই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের মৃত্যু নিয়ে সামনে আসে চাঞ্চলকর তথ্য। যার কারণে মৃত্যুর পরও আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই কিংবদন্তি। 

সবশেষ আদালতে মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার কারণে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়ার সময় মারাদোনার সাবেক দেহরক্ষী জুলিও কোরিয়াকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এমন নানান ঘটনায় এই বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে উথকণ্ঠা। সেই রেশ কাটতে না কাটতে এবার আরো ভয়াবহ তথ্য সামনে এসেছে। 

মারাদোনার ময়নাতদন্তকারী দুই ফরেনসিক বিশেষজ্ঞের একজন কার্লোস ক্যাসিনেলি। বুয়েনস আইরেসের একটি আদালতে তিনি বলেছেন, মৃত্যুর আগে ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন মারাদোনা। এর আগে গেল বৃহস্পতিবার বুয়েনস আইরেসের মারাদোনার বাড়িতে তার চিকিৎসা করা সাত জন ডাক্তার ও নার্সের বিরুদ্ধে করা মামলায় বৃহস্পতিবার প্রথম বারের মতো ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। এরপর প্রথম দিনের মতো গেল মঙ্গলবার বিচার শুরু হয়েছে। সেখানে সায়েন্টিফিক পুলিশ সুপারিনটেনডেন্সির ফরেনসিক মেডিসিনের পরিচালক কার্লোস ক্যাসিনেলি আদালতকে জানিয়েছেন, 'হৃৎপিণ্ডে সম্পূর্ণরূপে চর্বি এবং রক্ত জমাট বেঁধে ছিল, যার কারণে এমন অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন বিশ্বকাপজয়ী এই অধিনায়ক।' সেই রিপোর্টে আরো বলা হয়, মারাদোনা কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওরের দ্বিতীয় তীব্র পালমোনারি শোথ থেকে মারা গিয়েছেন। এমন রোগীকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করে উচিত নয়। অথচ মারাদোনার সেই চিকিৎসকরা বাড়িতে রেখে মারাদোনার চিকিৎসা দিচ্ছিলেন, যা অযৌক্তিক বলে আখ্যায়িত করেছেন এই বিশষজ্ঞ। এছাড়াও এই প্রসিকিউশনের মতে, এই কিংবদন্তির চিকিৎকরা নিজেদের দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। যার কারণে মৃত্যু হয়েছে তার। সেই সঙ্গে আদালতে পেশ করা সেই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, লিভার সিরোসিসের কারণে মৃত্যুর কমপক্ষে ১০ দিন আগে তার ফুসফুসে তরল পদার্থ জমতে শুরু করেছিল। এই বিষয়ে ডাক্তাররা কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেননি। অন্যদিকে বিচারকার্যের প্রথম দিনে মারাদোনার মৃত্যুর পরের একটি ছবি প্রকাশ করা হয়েছে আদালতে। যেখানে দেখা যায় মৃত্যুর আগে তার পেট অস্বাভাবিক ভাবে ফুলে গিয়েছিল। এই দুই তথ্যের মধ্যে অনেকটাই মিল রয়েছে এবং ধীরে ধীরে জট খুলতে শুরু করেছে। যদিও অভিযোগ আনা চিকিৎসকরা দোষী প্রমাণিত নন তাহলে তাদের ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। যদিও এই মামলা চলবে জুলাই পর্যন্ত। এই মামলায় মোট ১২০ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিবেন বলে আশা করা হচ্ছে। 

যেন সাত জনের বিরুদ্ধে মারাদোনার হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের মধ্য অন্যতম হলেন, মারাদোনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক লিওপোল্ডো লুক। যিনি শেষ চার বছর তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক হয়েছে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়াও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আগুস্টিনা কোসাচভ, যিনি মারাদোনার মৃত্যুর আগ তিনি কী ওষুধ খাবেন, সেটা নির্ধারণ করতেন এবং নার্স গিসেলা মাদ্রিদও আছেন সেই তালিকায়।

ইত্তেফাক/টিএইচ