মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

একমাত্র সন্তান দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়ে চিকিৎসাধীন, বেদনাবিধুর ঈদ কুমার বিশ্বজিতের

আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৫, ২১:১৪

এমন বেদনাবিধুর ঈদ কখনোই আসেনি দেশের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিতের জীবনে। ঈদের সময়টা বেশ ব্যস্ততায় কাটত। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনা তার জীবনের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। গায়কের একমাত্র সন্তান কুমার নিবিড় কানাডায় মারাত্মক দুর্ঘটনায় আহত হন। সেই থেকে এতটা সময় ধরে কানাডার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গেল এক বছর কানাডার মিসিসাগার একটি রিহ্যাব সেন্টারে আছেন নিবিড়।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে ছেলের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন কুমার বিশ্বজিত। তখন তিনি জানিয়েছিলেন যে দ্রুতই নিবিড়কে রিহ্যাব সেন্টারে নেওয়া হবে। সেখানেই তার জীবনের পরবর্তী সব চিকিৎসাসেবা শুরু হবে। শনিবার (২৯ মার্চ) বাংলাদেশ সময় রাতে কুমার বিশ্বজিত গণমাধ্যমকে জানান, এক বছর ধরে নিবিড় রিহ্যাব সেন্টারে আছেন।

একমাত্র ছেলে কুমার নিবিড়ের সঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ। ছবি: সংগৃহীত

বেশ চলছিল সবকিছু। ছেলে কানাডার একটি কলেজে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত। বাবা ঢাকার উত্তরার বাড়িতে বসে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে কতই না স্বপ্ন দেখছিলেন। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাবাও দেশ-বিদেশে গানে গানে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন। শ্রোতাদের মাতিয়ে চলছিলেন। হঠাৎ একটি দুর্ঘটনা যেন মুহূর্তেই সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দেয়। কানাডায় ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনায় ছেলে কুমার নিবিড় এতটাই মারাত্মকভাবে আহত হন যে এরপর ‘বাবা’ ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত হন কুমার বিশ্বজিৎ। বেশ কয়েক মাস ধরেই এমন অবস্থা চলছে। সন্তানের মুখে বাবা ডাক শোনার প্রহর গুনছেন দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী বাবা কুমার বিশ্বজিৎ। আশায় বুক বেঁধেছেন তিনি।

একমাত্র ছেলে কুমার নিবিড়ের সঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ। ছবি: সংগৃহীত

২৫ মাস ধরে কুমার বিশ্বজিৎ অবস্থান করছেন কানাডার টরন্টোয়। শুরুর দিকে সেখানকার সেন্ট মাইকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তার একমাত্র সন্তান কুমার নিবিড়। ২০২৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সড়ক দুর্ঘটনায় নিবিড় মারাত্মক আহত হলে মা-বাবা দুজনেরই ঠিকানা সেই সেন্ট মাইকেল হাসপাতাল। মাঝখানে কয়েকবার অল্প সময়ের জন্য ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। গেল বছরও একবার এসেছিলেন। ছেলের এখন যে অবস্থা, তাতে আপাতত বাংলাদেশের আসার কোনো চিন্তা নেই।

স্ত্রী নাঈমা সুলতানা ও সন্তান নিবিড়ের সাথে কুমার বিশ্বজিৎ। ছবি: সংগৃহীত

নিবিড়ের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে কানাডা থেকে কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, ‌‘খুবই ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে। এতটাই ধীরে হচ্ছে যে এটাকে কোনোভাবেই অনেক বেশি অগ্রগতি বলা যাবে না। বছরখানেক ধরে রিহ্যাবে আছে। এখানে স্পিচথেরাপি, ফিজিওথেরাপি, স্টিমিউলেটেড থেরাপি চলছে। স্বাভাবিক জীবনের জন্য যা যা করণীয়, সবই করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রতিদিনই নিবিড়কে বাইরের পরিবেশ দেখানোর চেষ্টা চলে। এখনো কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। নিজের পায়ে এখনো দাঁড়াতে পারে না। মাঝেমধ্যে মেশিনের মাধ্যমে দাঁড় করানোর চেষ্টা করানো হয়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, কিছু কিছু মাসল পাজম জায়গায় আছে। কথা বলার ব্যাপারটা কবে কখন হবে, কেউ বলতে পারে না।’

নানা সমস্যা থাকলেও অন্যদিকে উন্নতি হয়েছে বলে জানান কুমার বিশ্বজিৎ। তিনি বলেন, ‘ডাকলে সে তাকায়। ঘাড় ডানে-বাঁয়ে ঘোরায়। মাঝেমধ্যে হাত-পা নিজে থেকে নাড়ে। খাবারদাবার কৃত্রিম উপায়ে দিতে হয়। শরীরে এখন অক্সিজেন দিতে হয় ২ পারসেন্ট। এই ২ পারসেন্ট অক্সিজেন ছাড়াই নিবিড় সাত-আট ঘণ্টা থাকতে পারে। এটাই বা কম কিসে!’

ছেলে কুমার নিবিড়ের সঙ্গে কুমার বিশ্বজিৎ। ছবি: সংগৃহীত

কানাডার মিসিসাগার যে রিহ্যাব সেন্টারে নিবিড়ের চিকিৎসা চলছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট কুমার বিশ্বজিৎ। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের মেডিকেল সাপোর্টের রিহ্যাব পুরো কানাডায়ও কম আছে। এমনিতে দীর্ঘমেয়াদি আরও অনেক ধরনের রিহ্যাব সেন্টার আছে। সেখানে অপেক্ষাকৃত ভালো রোগী যারা, তারা সেখানে থাকেন, যারা খেতে পারেন, সাড়া দিতে পারেন। নিবিড়কে তো অনেক ওষুধ দিতে হয়, যার জন্য সার্বক্ষণিক নার্স দরকার। ইনএনটি সাপোর্টও দরকার। নিবিড় যেখানে আছে, ওদের রিহ্যাবে সাফল্যের হারও ভালো। এমনও আছে যে এ ধরনের রোগী পাঁচ বছর রিহ্যাবে থাকার পর পুরোপুরি স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেয়েছে। আমরা যেমন আশাবাদী, রিহ্যাবের ওরাও আশাবাদী। এখন দেখা যাক, কী হয়।’

ইত্তেফাক/এসএ