বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

বিয়ের আসরে বরকে গণপিটুনি, ৯ লাখ টাকা জরিমানা 

আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২০

বিয়ে বাড়িতে কনে ও তার পরিবারের সঙ্গে প্রতারণা করার অভিযোগে বরকে গণপিটুনি দিয়ে শরীর থেকে শেরওয়ানি খুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিয়ের পরিবর্তে গ্রাম্য সালিশে কনে ও তার পরিবারের ক্ষতিপূরণ বাবদ বরকে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করে বিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার ১৩ নম্বর বাঁশতৈল ইউনিয়নের কটামারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। 

এলাকাবাসী জানান, বর শরীফ মাহমুদ নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। তার পিতার নাম সাইফুল ইসলাম। গ্রামের বাড়ি মির্জাপুর উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের উত্তর পেকুয়া গ্রামে। অপরদিকে কনে শিলা আক্তারের পিতার নাম মো. আশরাফুল ইসলাম আকতার। গ্রামের বাড়ি একই উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের কটামারা গ্রামে। এক বছর আগে কনের সঙ্গে ৬ লাখ টাকায় কাবিন হয় বর শরীফ মাহমুদের। এক বছর ধরেই বিয়ে নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে টানাপোড়েন চলে। এ নিয়ে এলাকায় একাধিক সালিশও হয়। শেষ পর্যন্ত এলাকার মাতবরদের অনুরোধে কনের পরিবারকে রাজি করে বিয়ের তারিখ ঠিক হয়। 

গত ১ এপ্রিল মঙ্গলবার ছিল গায়ে হলুদ এবং ২ এপ্রিল বুধবার ছিল বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। দুপুরে বরপক্ষ আত্মীয়স্বজন নিয়ে কনের বাড়িতে হাজির হয়। কিন্তু কনে পক্ষের অভিযোগ, বিয়ে বানচাল করার জন্য চেষ্টা করেন বর শরীফ মাহমুদ। তার দুই বন্ধুকে দিয়ে প্রশাসনের ভয় দেখিয়ে বাল্যবিয়ে বলে প্রচার চালায়। এ নিয়ে শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে হইচই। একপর্যায়ে বরকে গণপিটুনি দিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। বরের শরীর থেকে শেরওয়ানি খুলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। বরের সঙ্গে আসা লোকজনদের আটক করে। 

এদিকে খবর পেয়ে এলাকার বিএনপির নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে মাতবরগণ সালিশের আয়োজন করে। সালিশে কনের কাবিন বাবত ৬ লাখ টাকা এবং বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা বাবদ ৩ লাখ টাকাসহ মোট ৯ লাখ টাকা বরকে জরিমনা করা হয়। পরে টাকা পরিশোধের জন্য কয়েক দিন সময় নিয়ে মুচলেকা দিয়ে বর ও তার পরিবার ছাড়া পান। সালিশে ১৩ নম্বর বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল মান্নান খান আকাশ, বাঁশতৈল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. আজাহারুল ইসলাম আজাহার ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদসহ কয়েক শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। 

এ ব্যাপারে বর শরীফ মাহমুদ ও তার পরিবার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, কনেপক্ষ অন্যায়ভাবে ও মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বিয়ে বানচাল করে দিয়েছে। সালিশে তাদের জোরপূর্বক ৯ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে ১৩ নম্বর বাঁশতৈল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন দেওয়ান বলেন, বিয়ে নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। ইউপি মেম্বারের উপস্থিতিতে গ্রাম্য সালিশে মাতবরগণ বরপক্ষকে ৯ লাখ টাকা জরিমানা করে ঘটনার মীমাংসা করে দেন।

ইত্তেফাক/টিএইচ