যেন একটি চলন্ত 'এটিএম বুথ' হিসেবে ব্যবহার করছে। বিপুল অর্থনৈতিক লাভের আশায় তারা একের পর এক বড় টুর্নামেন্ট নিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রে। ক্লাব বিশ্বকাপ, ফুটবল বিশ্বকাপ, কোপা আমেরিকা সবই এখন আমেরিকার মাটিতে, কারণ এখানকার টিকিট বিক্রি, স্পনসরশিপ আর সম্প্রচার স্বত্ব তো আকাশছোঁয়া চাহিদা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে-ফিফার এতসব আয়োজনে দেশটির ঘরোয়া ফুটবলের কী লাভ হচ্ছে কিংবা উন্নয়ন হচ্ছে?
মেজর সকার লিগের একমাত্র ক্লাব ইন্টার মায়ামি বিশ্বব্যাপী চর্চায় থাকে শুধুমাত্র লিওনেল মেসি, বুস্কেটস, লুইস সুয়ারেজদের মতো তারকা ফুটবলাররা রয়েছেন। এছাড়া ঐ লিগের কি আর কোনো ক্লাব আলোচনায় আসতে পেরেছে? যদি এমনটি জানতে চাওয়া হয় তাহলে উত্তর মিলবে না। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিফা শুধু মুনাফা নিয়েই যাচ্ছে, দিচ্ছে না কিছুই।
মার্কিন মুল্লুকে চলতি বছরের জুলাইয়ে বসতে যাচ্ছে ৩২ দল নিয়ে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। এছাড়া আগামী বছর ফিফা বিশ্বকাপের ২৩তম আসরেরও আয়োজক দেশগুলো মধ্যেও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ২০৩১ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নারী বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবেও এগিয়ে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সব মিলিয়ে বিশ্বফুটবলে আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র। এত এত জমজমাট টুর্নামেন্টের আয়োজক যেহেতু তারা। তবে এই আলোচনায় তাদের ঘরোয়া ফুটবলের কোনো উপকারেই আসছে না।
সম্প্রাতি ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো ফক্স স্পোর্টসকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে টুর্নামেন্ট আয়োজন করলে তাদের রাজস্ব 'দ্বিগুণ হয়ে যায়'। তিনি এটাও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র যদি আমার কথা শুনে, তাহলে তাদের লিগও বিশ্বের সেরা হয়ে উঠবে'। অথচ তার কথার আড়ালেই আছে এমন এক বাস্তবতা, যেখানে তার নেতৃত্বেই ফিফা আন্তর্জাতিক ফুটবলকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ঢুকিয়ে দিয়েছে এমনভাবে, যাতে এমএলএসের শ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে যায়।
রেলেভেন্ট স্পোর্টস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি ফিফা ও ইউএস সকারের বিরুদ্ধে যে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা করে, তার ফলেই এখন স্পেন বা ইতালির ঘরোয়া লিগ চাইলে নিজেদের মূল প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজন করতে পারে একেবারে এমএলএস ক্লাবগুলোর শহরে। তবে এতে এমএলএসের কোনো উপকারই হচ্ছে না, তাদের প্রচারণাও বাড়ছে না। শুধু ইউরোপিয়ান লিগের সম্প্রচারের সঙ্গে নয়, এখন মাঠের প্রতিযোগিতাতেও পড়ে গেছে।
একদিকে মেক্সিকান জাতীয় দল, অন্যদিকে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মতো দলগুলো নিয়মিত ম্যাচ খেলছে যুক্তরাষ্ট্রে। উপরন্তু, কোপা আমেরিকা ও ক্লাব বিশ্বকাপও এখানেই হচ্ছে। দর্শকদের মন তো আর শতভাগ বিভক্ত করা যায় না। যারা টাকা খরচ করছেন, তারা আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেখতেই বেশি ঝুঁকছেন, এমএলএসের ম্যাচে নয়। অথচ এসব টুর্নামেন্টের পেছনে ফিফার তীব্র অর্থলোভ ছাড়া অন্য কোনো নীতি নেই। মাঠের বাইরের এই নীতিহীন আগ্রাসন আজ এমএলএসকে এমন জায়গায় এনে ফেলেছে, যেখানে তারা প্রশ্ন তোলে এই দেশের ফুটবল বাজার কি সত্যিই দেশের ফুটবলের জন্য, নাকি আন্তর্জাতিক সংগঠনের লুটপাটের জন্য?
বিশ্লেষকরা মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ঘরোয়া লিগকে বাঁচাতে চায়, তাহলে এখনই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দরকার 'সকার প্রোটেকশনিজম', যেখানে বিদেশি লিগের আগ্রাসন ঠেকানো হবে। নাহলে, এমএলএস হারিয়ে যাবে, স্মৃতি হিসেবে থাকবে শুধু দেশটির ফুটবল ইতিহাসে। বাইরের লিগগুলো ম্যাচ আয়োজন কমাতে হবে। কিন্তু বর্তমান আন্তর্জাতিক আইন এবং ফিফার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ ধরনের সুরক্ষা বর্তমানে প্রায় অনুপস্থিত।
মুলত তাদের কথা ফিফাকে তাদের সুবিধেমত যুক্তরাষ্ট্রেকে ব্যবহার করা থেকে বাধা দেওয়া। কারণ একসময় ফিফা বলত, তারা নতুন বাজারে ফুটবল ছড়িয়ে দিতে চায়। কিন্তু এখন তাদের লক্ষ্য হলো কেবল অর্থ আয়। আর মার্কিন মুল্লুকের মতো ধনী বাজার তাদের সেই লোভের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাই বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই অর্থ লোভে বিপাকে দেশটির ঘরোয়া ফুটবল।