এক সময় স্কুলটিতে শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ৫০০। কিন্তু নানা সংকটের মুখে তা হঠাৎ কমতে শুরু করে। কমে দাঁড়িয়েছে ৩০০ জনে। অথচ এলাকার একমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘিরে উচ্ছ্বাস আর আশ্বাসের কমতি ছিলনা এলাকাবাসীর মধ্যে। সেখানে নতুন করে দেখা যাচ্ছে শুধুই হতাশা।
বন্দরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২২ নম্বর রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে । একসময় পাশের হারসহ নানা কারণে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেশ সুনাম ছিল।
বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক আকবর আলী বলেন, 'বিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত। এটির প্রতি কারো কোনো খেয়াল নেই। সরকারিভাবেও এটির উন্নয়নে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। স্কুলের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে অথচ একটা ভবনের কারণে আমাদের ছেলেমেয়েরা খুব কষ্ট করে লেখাপড়া করছে। বর্ষা মৌসুমে বাচ্চারা ক্লাসই করতে পারে না। কারণ পুরো ক্লাসরুম পানিতে ডুবে যায়।'
অন্য এক অভিভাবক আকলিমা বেগম বলেন, ‘২৬ নম্বর ওয়ার্ডে এই একটিই মাত্র স্কুল । তিনটি রুমে কীভাবে ৩০০ বাচ্চা পড়ালেখা করে বুঝি না। আমাদের আশপাশের ওয়ার্ডগুলোতে অনেক স্কুল রয়েছে। সেই স্কুলগুলোতে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম থাকার পরও নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের এখানে অনেক দিন ধরেই মাত্র তিনটি ঘরে বাচ্চারা কষ্ট করে পড়ালেখা করার পরও বিষয়টি কারো চোখে পড়ছে না।'
তবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদানে হিমশিম খেলেও চাকরির স্বার্থে এবং দায়িত্ববোধের কারণে এখনো প্রতিষ্ঠানের হাল ধরে রেখেছেন শিক্ষকরা। তারা মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অচিরেই তাদের প্রতিষ্ঠানের সমস্যা দূর করতে এগিয়ে আসবেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসিমা বেগম। নাসিমা বেগম আরো জানান, এলাকাবাসীর শিক্ষার বিষয়টি চিন্তা করে ১৯৩০ সালে তার পিতা আব্দুল জব্বার বিদ্যালয়ের জন্য ১০ শতাংশ সম্পত্তি দান করেন। সেই থেকে তারা বিদ্যালয়ের পেছনে নানাভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের কষ্ট হলেও শিক্ষার মান বজায় রেখে তারা বিদ্যালয়টি চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু জায়গা সংকুলান না হওয়ায় তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিনটি কক্ষের মধ্যে প্রতিটি কক্ষে ১০০-এরও অধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করতে হয়। কিছুই করার নেই। আমরা নিরুপায়।
বর্ষা মৌসুমে প্রতিটা ক্লাসরুম হাঁটুপানিতে ডুবে যায় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের অনেক ঝুঁকি নিয়ে পড়ালেখা করতে হয়। তার ওপরে ক্লাসগুলো এতটাই অন্ধকার যে বাতি না জ্বালিয়ে সেখানে ক্লাস করা যায় না । আর বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে তো কোনো কথাই নেই, অন্ধকারে গরমে মোমবাতি কিংবা টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ক্লাস করতে হয়। ওই মুহূর্তটাকে মনে হয় আমরা যেন এখনো আদিম যুগে রয়ে গেছি।
বন্দর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রেজাউল করিম বলেন, ২২ নম্বর রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বন্দরের চারটি স্কুলের ভবন জরুরি ভিত্তিতে নির্মাণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের ডিডি মহোদয়ের কাছে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছি। আমরা আশাবাদী আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ভবনগুলো নির্মাণের অনুমোদন পেয়ে যাব । চারটি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের অনুমোদন পেলে রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজই আগে ধরা হবে।