পাকিস্তানের জনপ্রিয় গায়ক মুস্তফা জাহিদ ঢাকায় আসলেও শেষ পর্যন্ত পূর্ব নির্ধারিত ‘মেলোডি আনলিশড’ শিরোনামের কনসার্টটি হয়নি।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) কনসার্টের ঘণ্টাখানেক আগে এক ফেসবুক পোস্টে কনসার্ট স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে আয়োজক প্রতিষ্ঠান মেলোডি অ্যান্ড মাইন্ড কমিউনিকেশন।
আয়োজক প্রতিষ্ঠান 'মেলোডি অ্যান্ড মাইন্ড কমিউনিকেশন' ফেইসবুক পোস্টে কনসার্ট স্থগিতের কারণ হিসেবে ‘নিরাপত্তা ঝুঁকির’ কথা তুলে ধরেছে।
এর আগে কনসার্টে অংশ নিতে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) পাকিস্তানের প্রখ্যাত রকস্টার এবং রোক্সেন ব্যান্ডের প্রধান ভোকালিস্ট মুস্তফা জাহিদ প্রথমবারের মতো ঢাকায় আসেন।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর চায়না-বাংলাদেশ এক্সিবেশন সেন্টারে ‘মেলোডি আনলিশড’ কনসার্টটি হওয়ার কথা ছিল। কনসার্টে জাহিদের সঙ্গে একই মঞ্চে গান গাওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের সংগীতশিল্পী এ কে রাহুলসহ ব্যান্ড লেভেল ফাইভ ও এনকোরের।
এদিকে হঠাৎ করে অনুষ্ঠান বাতিল করে দেওয়ায় আয়োজক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণ ও প্রতারণাসহ বেশ কিছু অভিযোগ তুলেছেন শিল্পীরা।

কনসার্টে পারফর্ম করার জন্য এক প্র্যাকটিস সেশনেও অংশ নিয়েছেন জাহিদ। তবে যোগাযোগ করতে পারেননি আয়োজক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
শুক্রবার রাতে ফেইসবুকে এক পোস্টে মুস্তাফা জাহিদ লিখেছেন, ‘একটু আগেই আয়োজকদের কাছ থেকে জানতে পারি নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে আজ রাতের কনসার্টটি বাতিল করা হয়েছে।’
পাকিস্তানি এই গায়ক লিখেছেন,‘আমরা গতরাতে (বৃহস্পতিবার) ঢাকায় নেমে প্রস্তুতি নিয়েছি, দর্শকদের জন্য আজকের এক অসাধারণ রাত উপহার দিতে আমরা ঢাকার শিল্পীদের সঙ্গে গভীর রাত পর্যন্ত রিহার্সাল করেছি।’
এই শিল্পী লিখেছেন, ‘আয়োজকদের পক্ষ থেকে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের পরও আমরা এখানে এসেছি শুধু আপনাদের ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানাতে, আপনাদের মুখে হাসি ফোটাতে। কিন্তু এই কনসার্ট বাতিলের সিদ্ধান্তটি একেবারেই আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। আমরা হতাশ ও কষ্ট পেয়েছি।’
ভক্তদের উদ্দেশে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি লিখেন, ‘ঢাকা, আমরা এসেছিলাম তোমাদের জন্য। আমরা প্রস্তুত ছিলাম। খুব শিগগিরই হয়ত আরও ভালোভাবে তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে।’
কনসার্ট স্থগিতের কোনো কারণ বা বিস্তারিত কিছু জানানো হয়েছিল কিনা প্রশ্নে গ্লিটজকে সংগীতশিল্পী এ কে রাহুল বলেন, ‘কনসার্ট স্থগিতের বিষয়ে আমাদের জানানো হয়নি। আমরা সকাল থেকে তথ্য পাচ্ছিলাম, আয়োজকরা ভেন্যু এবং কনসার্টের কোনো প্রস্তুতি নেয়নি। আমরা যোগাযোগ করার চেষ্টা করি, কিন্তু তারা কল ধরেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমার মোস্তফা জাহিদের সঙ্গে দেখা হয়েছে। উনার ম্যানেজার বাংলাদেশ থেকে একজন গিটারিস্ট নিয়েছিল। আমরা প্র্যাকটিসেও গিয়েছিলাম। এটা দেশের শিল্পীসমাজের জন্য খুব লজ্জার ঘটনা ঘটে গেল। আমাদের ইন্ড্রাষ্ট্রি এমনিতেই ধ্বংস হয়ে গেছে, এসব আয়োজক প্রতিষ্ঠান দর্শকদের ধোঁকা দিয়ে এই জায়গাটা আরও নষ্ট করে ফেলেছে।’
এদিকে আয়োজক প্রতিষ্ঠানের অপেশাদার আচরণের কথা তুলে ধরেন ব্যান্ড লেভেল ফাইভের ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফিস।
তিনি গ্লিটজকে বলেন, ‘আমরা কোনো কনসার্টে যখন চুক্তিবদ্ধ হই, তখন অর্ধেক পেমেন্ট নিই, বাকি অর্ধেক কনসার্টের আগের দিন নিই। তারা আমাদের অর্ধেকের চেয়েও কম পেমেন্ট করে। বৃহস্পতিবার তাদের বাকি পেমেন্ট করার কথা ছিল।
“আমি বিকাল থেকেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি, তারা কল ধরে না। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে তারা কল দিয়ে জানায়, পেমেন্ট দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, শুক্রবার স্টেজে উঠার আগে তারা পেমেন্ট ক্লিয়ার করে দিবেন।’
নাফিস বলেন, ‘তাদের মধ্যে অপেশাদার আচরণ ছিল, তারা নিজে থেকে কোনো তথ্য দিত না, আমরা দিলেও সেটা বলতে পারত না। আমাদেরকে ভেন্যু বলেছে আর্মি স্টেডিয়ামে,পরে তাদের পেইজে পোস্ট দেয় বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে কনসার্ট হবে।
“সকালে আমরা জানতে পারি, ভেন্যুতে কোনো আয়োজন নেই। তারপর থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি, কিন্তু ফোনে পাই না।"
'মেলোডি অ্যান্ড মাইন্ড কমিউনিকেশন' তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে জানিয়ে লেভেল ফাইভের এই ম্যানেজার বলেন, "আমাদের ব্যান্ডেও এটার বড় ইফেক্ট পড়েছে, আমাদের ভক্ত ও দর্শকদের কাছে আমাদের নাম ভাঙিয়ে টিকেট বিক্রি করেছে, তারাও তো একটা স্পেমের শিকার হয়েছে।"
কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, "সবাই মিলে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে হয়ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
তিন ক্যাটাগরিতে টিকেট বিক্রি করেছিল আয়োজক প্রতিষ্ঠান। জেনারেল ১ হাজার ৯৯৯ টাকা, মেলোডি জোন ৩ হাজার ৪৯৯ এবং প্রিমিয়াম ১০ হাজার টাকা।
এদিকে শিল্পীদের এসব অভিযোগ নিয়ে জানতে মেলোডি অ্যান্ড মাইন্ড কমিউনিকেশনের প্রধান আয়োজক শরীফা রানীকে কল করা হলে তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।