শ্রমিক সংকটে ভুগছে জাপানের পরিবহন খাত। এতে দেশটির শিল্প কার্যক্রমে স্থবিরতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবেলায় বিদেশি ট্রাকচালক নিয়োগে এগিয়ে এসেছে জাপানের একটি লজিস্টিকস কনসালটিং সংস্থা। লক্ষ্যস্থলে প্রাধান্য পাচ্ছে বাংলাদেশ।
জাপানি সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া জানিয়েছে, ফুনাই সোকেন লজিস্টিকস নামের সংস্থাটি এ বছর বাংলাদেশে তিনটি বড় নিয়োগ ক্যাম্পেইন পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে। প্রার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্য তারা স্থানীয় এক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় জাপানি রাস্তার আদলে একটি কৃত্রিম ড্রাইভিং কোর্টও নির্মাণ করবে। এতে জাপানে পাড়ি দেওয়ার আগে চালকদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন সহজ হবে।
প্রথম ধাপে বাংলাদেশে চাকরির বিজ্ঞাপন প্রচার এবং প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ করবে স্থানীয় সংস্থাগুলো। এরপর জাপান থেকে নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশে এসে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেবেন।
সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়ায়ও সহায়তা করবে ফুনাই সোকেন। নিয়োগপ্রাপ্তদের বিমানবন্দর থেকে গন্তব্যে পৌঁছানো, সরকারি কাগজপত্র তৈরি, ভাষা প্রশিক্ষণ এবং জাপানে বসবাস নিয়ে ওরিয়েন্টেশন ক্লাসের ব্যবস্থা করবে প্রতিষ্ঠানটি। কর্মক্ষেত্রের নির্দেশনাও থাকবে বিভিন্ন ভাষায় তৈরি।
এই কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিকভাবে ৯০ জন বাংলাদেশিকে নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে। আগামী দিনে সংস্থাটি ফিলিপাইন, নেপাল ও ইন্দোনেশিয়াসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও এ কার্যক্রম সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করেছে। বার্ষিক নিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ জন চালক।
জাপানে অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা সংক্রান্ত ২০২৪ সালের একটি আইনের ফলে ট্রাকচালকের ঘাটতি চরমে পৌঁছেছে। এনএক্স লজিস্টিকস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড কনসালটিং-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশটিতে বাণিজ্যিক ট্রাক পরিচালনার সক্ষমতা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩৪ শতাংশ কমে যাবে।
এদিকে, জাপানে বিনা খরচে কর্মী পাঠাতে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি দেশটির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে। ১০ এপ্রিল প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশি কর্মীরা বিনা খরচে জাপানি ভাষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ পাবেন এবং অভিবাসন ব্যয় ছাড়াই চাকরির সুযোগ তৈরি হবে।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা কেয়ারগিভার, প্লাস্টিক মোল্ডিং, রড বাইন্ডিং, স্ক্যাফোল্ডিং, কার পেইন্টিং, ওয়েল্ডিং, অটোমোবাইল মেকানিক ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্যাকেজিংসহ বিভিন্ন খাতে কাজের সুযোগ পাবেন। চুক্তির মেয়াদ শেষে দেশে ফিরে এসব দক্ষতা স্থানীয় শিল্প খাতে কাজে লাগানো যাবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল ম্যানপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (আইএম) জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আওতায় সরকারিভাবে জাপানে দক্ষ কর্মী পাঠানো হচ্ছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিএমইটি’র ব্যবস্থাপনায় জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রয়েছে।