বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১১ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

বন্দীদের নির্যাতন

মাথায় ‘ডেভিডের স্টার’ এঁকে ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিল ইসরায়েল

আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:২১

তিন বছর ইসরায়েলে আটক থাকার পর ফিলিস্তিনি বন্দী মুসাব কাতাওয়ি গত বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তি পাওয়ার আগে এক চূড়ান্ত অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হন তিনি।

ইসরায়েলি কারারক্ষীরা আবর্জনার বাক্সে তার মাথা ঠেলে দেয়। তার চুলের কিছু অংশ কামিয়ে দেয়। স্টার অব ডেভিড বা ডেভিডের স্টার এঁকে তার চুল কামানো হয়।

অধিকৃত পশ্চিম তীরের নিজ শহর কালকিলিয়ায় মিডল ইস্ট আই-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে কাতাওয়ি জানান, কিশোর বয়সে গ্রেপ্তার আহমেদ মানাসরার সঙ্গে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তিনিও ছিলেন। মানাসরা  ১৩ বছর বয়সে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক দশক কারাগারে কাটিয়েছেন। মুক্তির আগে তাকেও কাতাওয়ির মতো নির্যাতন করা হয়েছে।

ইসরায়েলে আটক থাকার পর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন মুসাব কাতাওয়ি। ছবি: সংগৃহীত

কাতাউই বলছিলেন, 'তারা ভোর হওয়ার পর আমাদের জড়ো করে, গণনা করে এবং নিয়ে যায়। সেই মুহূর্তে, আমি আহমদ মানাসরাকে লোকজনের মধ্যে দেখতে পেলাম। আমরা র‍্যামন এলাকায় পৌঁছালাম। তারা আমাদের ছবি তুলেছিল, কাগজপত্রে সই করতে বলেছিল। যে মুহূর্তে আমাদের মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল, তারা একটি আবর্জনার বাক্স এনে আমাদের মাথা ধরে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় এবং আমাদের মারধর করে। একজন আমার মাথায় ডেভিডের তারা এঁকে দেয়।

ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে এর আগেও ফিলিস্তিনিদের নির্যাতন করার ক্ষেত্রে ইসরায়েলি পতাকায় প্রদর্শিত ধর্মীয় প্রতীক 'স্টার অফ ডেভিড' ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালের আগস্টে ইসরায়েলি বাহিনী অধিকৃত পশ্চিম তীরে একজন ফিলিস্তিনি ব্যক্তির গালে এই চিহ্নটি এঁকে দেয়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় তাণ্ডব শুরু করার পর থেকে ইসরায়েলের কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দীদের অবস্থা মারাত্মকভাবে খারাপ হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বেশ কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। বহু বন্দীকে হত্যা করা হয়েছে, অন্যরা গুরুতর মারধর, নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে বর্ণনা করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত কিছু ফিলিস্তিনি বন্দীর কপালে একটি 'প্রতীকী নম্বর' লেখা ছিল।

ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির হত বছরের জুলাই মাসে গর্ব করে বলেছিলেন, তিনি ফিলিস্তিনি বন্দীদের অবস্থা আরও খারাপ করে তুলেছেন। তিনি বলেছিলেন, জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রীর পদ গ্রহণের পর থেকে, আমি নিজের জন্য যে সর্বোচ্চ লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, তার মধ্যে একটি হলো - কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনিদের (তিনি 'সন্ত্রাসী' শব্দ উল্লেখ করেন) অবস্থা আরও খারাপ করা এবং আইন অনুসারে তাদের অধিকার ন্যূনতম পর্যায়ে কমিয়ে আনা।

মুসাব কাতাওয়ি নাফহা কারাগারে বন্দী ছিলেন। তিনি বলেছেন, সেখানে তাকে এবং তার সঙ্গে থাকা অন্য ফিলিস্তিনিদের প্রতিদিন মারধর করত কারারক্ষীরা।

তিনি বলেন, আমাদের প্রচণ্ড মারধর করা হয়। তারা আমাদের অনেক অপমান করেছে। আমাদের ওপর পা রেখেছে, আমাদের বিরুদ্ধে 'কুকুর' শব্দ ব্যবহার করেছে। এটা খুবই কঠিন (সময়) ছিল।

কাতাওয়ি অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে 'খাদ্যের অভাব, স্বাস্থ্যবিধির অভাব, রোগ-শোকের' বর্ণনা করেছেন। তিনি ফিলিস্তিনি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বন্দীদের সুরক্ষার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাদের পরিস্থিতি 'বিপজ্জনক থেকেও খারাপ'।

ইত্তেফাক/এসকে