শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

বিমানবন্দরে বিশেষ নজরদারি

কৌশলী হয়েও লাভ হচ্ছে না চোরাকারবারীদের

  • চোরাচালান ঠেকাতে কঠোর নজরদারি
  • তিন মাসে পঞ্চাশ হাজারের বেশি নিষিদ্ধ ‘ভ্যাপ’ জব্দ
  • মালয়েশিয়া ফেরত যাত্রীদের ওপর বাড়তি নজর
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:০৯

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এক শ্রেণির যাত্রী শুল্ক ফাঁকি দিয়ে পণ্য বের করার নানা চেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে কঠোর নজরদারি চলছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এতে করে গত কয়েকদিন ধরে ১ হাজারেরও অধিকসংখ্যক মোবাইল, সিগারেট, অধিক পরিমাণে আমদানি নিষিদ্ধ ই-সিগারেট ‘ভ্যাপ’ জব্দ করা হয়েছে।

আমদানি নিষিদ্ধ হলেও ই-সিগারেট ‘ভ্যাপ’ আনার চেষ্টা করছে এক শ্রেণির মালয়েশিয়া ফেরত যাত্রী। গত জানুয়ারিতে দেশে ভ্যাপ আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়। এরপরই বিমানবন্দরে সতর্কতা বাড়ায় কাস্টমস। গত তিন মাসে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের অধিকসংখ্যক ভ্যাপ জব্দ করা হয়। এরপরও মালয়েশিয়া ফেরত যাত্রীরা চেষ্টা করছে আমদানি নিষিদ্ধ এই ই-সিগারেট আনার।

কাস্টমসের একটি সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন ধরে বিমানবন্দরে ১ হাজারের অধিকসংখ্যক মোবাইল এবং অধিক সংখ্যক আমদানি নিষিদ্ধ ভ্যাপ জব্দ করা হয়েছে । যার আনুমানিক কয়েক কোটি টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য পণ্য জব্দ ও অনেক পণ্যের শুল্ক আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা কাস্টমস হাউজের প্রিভেন্টিভ টিমের উপ-কমিশনার ইফতেখার আলম ভূঁইয়া বলেন, ‘গত জানুয়ারিতে ভ্যাপ আমদানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর আমরা বাড়তি নজরদারি শুরু করি। ভ্যাপ সাধারণত মালেয়শিয়া থেকে আমদানি করা হয়। সে কারণে আমরা মালোশিয়া ফেরত যাত্রীদের ওপর বাড়তি নজরদারি করি।’

তিনি বলেন, ‘আমদানি নিষিদ্ধের পরও আমরা ভ্যাপ নিয়ে আসার একটি চেষ্টা লক্ষ্য করছি। আমাদের নজরদারির কারণে গত তিন মাসে পঞ্চাশ হাজারের অধিক সংখ্যক পিস ভ্যাপ জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও আমদানি নিষিদ্ধ কোনও পণ্যই বিমানবন্দর হয়ে দেশে ঢুকতে পারবে না, এমন কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।’

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মালেয়শিয়া থেকে আসা কিছু যাত্রী নিয়মিত ভ্যাপ আনার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও কুরিয়ারের মাধ্যমে আনার চেষ্টা হচ্ছে। এটি যেহেতু আমদানি নিষিদ্ধ তাই নানা কৌশল অবলম্বনেরও চেষ্টা চলছে। কিন্তু বিমানবন্দরে কর্মরত বিভিন্ন সংস্থার কঠোর নজরদারির কারণে প্রায়ই ধরা পড়ার ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও বর্তমানে কাস্টমস কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন যোগদানের পর বিমানবন্দরে সফল হতে পারছে না চোরাকারবারিরা।

বিমানবন্দর কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার সুমন দাশ ইত্তেফাককে বলেন ,বর্তমানে এক শ্রেণির যাত্রীদের শুল্কায়ন ছাড়াই পণ্য বের করে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। লাগেজ রুলসের বাইরেও তারা অধিক ওজনের মালামাল নিয়ে আসছেন। এ ছাড়াও যেগুলো শুল্কায়িত পণ্য সেগুলোও নিয়ে এসে শুল্ক ছাড়াই বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কাস্টমস টিম বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে।

ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। আর ভ্যাপ যেহেতু মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর সে দিকটা লক্ষ্য রাখতে বিশেষভাবে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।’

তিনি বলেন, আমাদের কর্মকর্তারা সেই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করছেন। এ কারণে যারাই এই পণ্য আনার চেষ্টা করছে তারাই ধরা পড়ছে। এ ছাড়া অন্যান্য পণ্য রয়েছে যেগুলোতে অবশ্যই শুল্ক দিতে হবে। এমন যাত্রী রয়েছেন তারা এগুলো শুল্ক ছাড়াই নিয়ে যেতে চান। আমরা এগুলোতে যাত্রীদের নিরুৎসাহিত করার জন্য বলছি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে স্ক্যানিং না করিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেসব ছোট ছোট চালান আসছে সেগুলোতে অবৈধ মাল থাকলে সেগুলো ধরাও পড়ছে। আমাদের অফিসাররা চেষ্টা করে যাচ্ছে যেন কোনো অবৈধ্ শুল্কায়নযোগ্য পণ্য বাইরে চলে না যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদনের পর ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ইএনডিএস) সংশ্লিষ্ট সব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘আমদানি নীতি আদেশ, ২০২১-২৪’ সংশোধন করে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য তালিকায় ই-সিগারেট অন্তর্ভুক্ত করে গত ৩১ ডিসেম্বর আদেশ জারি করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পরদিন তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ই-সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

ইত্তেফাক/এমএএম