শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২ বৈশাখ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

রবীন্দ্রসরোবরের উন্মুক্ত চত্বরে সুরে সুরে বর্ষবরণ

আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:৪৩

রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটতেই রাজধানীর ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে শুরু হয় চ্যানেল আই-সুরের ধারা আয়োজিত ১৪৩২ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। রবীন্দ্রসরোবরের উন্মুক্ত চত্বরে যেন প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়েই শুরু হলো নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর সূচনা। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের শিল্পীদের সরোদের সুর আর তবলার তালে বরণ করে নেওয়া হয় বঙ্গাব্দ ১৪৩২-কে।

যন্ত্রসংগীতের পরই সুরের ধারার খুদে শিল্পীদের কণ্ঠে আকাশে-বাতাসে ছড়িয়ে গেল ‘আলো আমার আলো ওগো’র সুর। ওরা গানে গানে জানিয়ে গেল, আলোর স্রোতে হাজার প্রজাপতির পাল তোলার কথা।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিল্পীরা। ছবি: সংগৃহীত

তৃতীয় পরিবেশনা ছিল ‘প্রভাত বীণা তব বাজে’ সুরের ধারার সমবেত সংগীত। এরপরপরই এল ‘ভিন্ন জাতিগোষ্ঠী’র কণ্ঠে পার্বত্য অঞ্চলের গান। দেশাত্মবোধক গান, রবীন্দ্রসংগীত, লোকগীতিসহ পঞ্চকবির গান পরিবেশনা হয়েছে এ আয়োজনে।

শিল্পী ফাহিম হোসেন চৌধুরী শোনালেন, ‘আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ’। শিল্পী প্রিয়াংকা গোপের কণ্ঠে শোনা গেল ‘আমি অকৃতী অধম ব’লেও তো কিছু কম ক’রে মোরে দাওনি’।

প্রতিবারের মতো চ্যানেল আই-সুরের ধারা আয়োজিত এবারের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানেও অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিল্পীরা। চ্যানেল আইয়ের পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন গণমাধ্যমকে জানান, এবার ২৮ জাতিগোষ্ঠী নিয়ে আয়োজিত হয় এ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

রবীন্দ্রসরোবরের উন্মুক্ত চত্বরে সুরে সুরে বর্ষবরণ। ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্রসরোবরে ক্রমশ আলো স্পষ্ট হতে হতে ব্যঞ্জনা বাড়ছিল পরিবেশনার। সুরের ধারার শিল্পী স্বাতী সরকারের কণ্ঠে ‘ওগো দুঃখ জাগানিয়া’ শেষ হতেই লোকসংগীতশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় পরিবেশন করলেন ‘পাল্টে গেল পঞ্জিকারও পাতা, বিদায় নিল আরও একটি সন, খুলতে হবে নতুন হালখাতা’।

এ রেশ না কাটতেই শারমিন আক্তারের কণ্ঠে শাহ আবদুল করিমের ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’ সত্যিকারভাবে যেন তরঙ্গ তুলে দিল উপস্থিত শ্রোতাদের মধ্যে। তারাও কণ্ঠ মেলালেন শিল্পীর সঙ্গে।

চ্যানেল আই-সুরের ধারা আয়োজিত ১৪৩২ বর্ষবরণ। ছবি: সংগৃহীত

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ অনুষ্ঠানের প্রায় শেষে সবার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন বাঙালির নববর্ষ নিয়ে তার ভাবনা। তিনি বললেন, ‘আমাদের সময়ের উদ্‌যাপন এর চেয়ে কিছু আলাদা ছিল, তা না। আমাদের অনেক কিছু নিয়ে মতপার্থক্য আছে, কিন্তু বাঙালির নববর্ষ নিয়ে মতপার্থক্য আছে দেখিনি।’

অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ তার সময়ের কথা বলতে বলতে জানান, তখন ঢাকা শহর ফাঁকা ছিল। নববর্ষে সবাই পুরোপুরি বাঙালি হয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (মাঝে)। ছবি: সংগৃহীত

প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই বর্ষবরণ আয়োজনে কখনো কৃষ্ণকান্ত আচার্যের কণ্ঠে নজরুলসংগীত ‘পরদেশী মেঘ যাও রে ফিরে, বলিও আমার পরদেশী রে’ শোনা গেল। কখনো সুরের ধারার শিল্পীরা সমবেতভাবে পরিবেশন করলেন ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’।

এদিকে, রবীন্দ্রসরোবরে আরেক পাশে দিনভর চলছে ছবি আঁকার আয়োজন। শিল্পী অশোক কর্মকার, জাহিদ মুস্তাফা, সুপর্ণা এলিস গোমেজ, কিরীটী রঞ্জন বিশ্বাসসহ আরও অনেক শিল্পী উপস্থিত হয়ে একই ক্যানভাসে ছবি আঁকেন।

শিল্পীরা বললেন, নতুন প্রজন্মকে এই আয়োজনের সঙ্গে সংযুক্ত করে দিতে আঁকা হচ্ছে এই ছবি। সকাল ছয়টায় অনুষ্ঠান শুরুর সময় ছিল সাদা ক্যানভাস। দেড় ঘণ্টার মধ্যে আঁকা হয়ে যায় বড় ক্যানভাসে এক ছবি। যেখানে বাবার কাঁধে চড়ে বাঘের মুখোশ পরে উৎসবে শামিল হয়েছে এক শিশু- সেই দৃশ্য।

ছবি আঁকছেন শিল্পী অশোক কর্মকার। ছবি: সংগৃহীত

বরাবরের মতো সুরের ধারার বর্ষবরণের অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেছে চ্যানেল আই। এবারের আয়োজনে সহযোগিতা করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

অনুষ্ঠানকেন্দ্র করে ছিল শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার কঠোর নজরদারি। প্রায় আড়াই ঘণ্টার চ্যানেল আই-সুরের ধারা আয়োজিত ১৪৩২ বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শেষ হয় সমবেত কণ্ঠে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।

ইত্তেফাক/এসএ