খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবির পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিপক্ষে মৌনমিছিল, মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিকে মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাত থেকে কুয়েটের আবাসিক ৬টি হলে ইন্টারনেট ও সুপেয় পানি সরবরাহের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার বেলা ১২টায় ভিসি অধ্যাপক ড. মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘দুর্বার বাংলা’ ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হয়ে আবাসিক হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তারা ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ভবনের দেওয়ালে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি সম্বলিত পোস্টার সেঁটে দেয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, ভিসি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন। ইন্টারনেট, পানি অফ করে হল থেকে ছাত্রদের বের করে দিয়েছেন। ভিসি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ইন্ধন জুগিয়েছেন। এই ভিসিকে অপসারণ আমাদের একমাত্র দাবি।
তারা বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে প্রশাসনের কাছে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের নাম প্রকাশ করার দাবি জানান তারা।
অপরদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি প্রত্যাখ্যান করে মানববন্ধন করেছেন কুয়েট শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মসূচি থেকে তারা ঘোষণা করেন প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না তারা।
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সায়েদুল ইসলাম বলেন, গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর উস্কানি ও অংশগ্রহণে কুয়েটের পড়ালেখার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। ভিসি স্যার একজন ভালো মানুষ। তিনি সবসময় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকসহ সকলের প্রতি যত্নশীল। তাই তার পদত্যাগের যে এক দফা দাবি শিক্ষার্থীরা করেছে- সেটি আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় যারা যারা জড়িত তাদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা ক্লাসে ফিরব না। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আমাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করবেন। যেসব শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে কুয়েটকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে, তাদের প্রতি আহ্বান জানাবো তারা যেন শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত না করে।
তিনি আরও বলেন, কুয়েট একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যেখানে এই প্রতিষ্ঠানকে আমরা আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি—সেখানে আন্দোলনের নামে সবকিছুকে পিছিয়ে দেওয়া হলে আমরাও সেটি মেনে নেব না। তাই আমাদের সন্তান তুল্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাবো—এভাবে আন্দোলন না করে তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করে।
এদিকে গত সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ও আগামী ২ মে আবাসিক হল এবং ৪ মে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ঐ রাতেই প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গত মঙ্গলবার দুপুরে ৬টি আবাসিক হলের তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা।
তবে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ দপ্তরের ডেপুটি পরিচালক ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, দুই মাস আগে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো সিলগালা করে দেওয়া হয়। ঐ সময় হলের ইন্টারনেট সংযোগ এবং পানির লাইন যেভাবে ছিল, এখন সেভাবেই রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলের ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন কিংবা পানির লাইন বন্ধ করেনি।