মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সাজেক ভ্যালিতে পানীয় জলের সংকট চরমে

আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৫

অনিন্দ্য সুন্দর রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার পর্যটন নগরী সাজেকে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। যে কোনো মূহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে হোটেল-মোটেল-কটেজ। পানি সংকটের কারণে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে পর্যটন ব্যবসায়ীরা কঠিন সময় পার করছেন। মূলত যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এই এলাকার ঝিরি, ঝরণার পানি শুকিয়ে গেছে। ঝিরি-ঝরণা এ এলাকার পানি উৎসের প্রধান ক্ষেত্র।

এই দুর্গম এলাকার বাসিন্দা এবং হোটেল-মোটেল মালিকরা ঝিরি-ঝরণার পানি দিয়ে তাদের নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন। পর্যটনভিত্তিক পাহাড়-পর্বতবেষ্টিত এ অঞ্চলটিতে বিকল্প কোনো পানি ব্যবস্থা না থাকায় এ সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

স্থানীয়দের মতে, প্রকৃতির সঙ্গে আমরা যেমন আচরণ করছি, প্রকৃতিও আমাদের সঙ্গে তেমন আচরণ করছে। অনেক বছর ধরে জুম চাষের নামে প্রতিদিন সাজেকের কোনো না কোনো পাহাড়ের গাছপালা কেটে বন উজার করে আগুন দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া এ অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে বন উজার করে যত্রতত্র হোটেল-মোটেল-কটেজ নির্মাণ পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর বলেই মনে করেন স্থানীয়রা। তারা মনে করেন, এসব কারণে বৃষ্টি কমে গেছে। পাহাড়ের ঝিরি-ঝরণা শুকিয়ে যাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে।

এমন কর্মকাণ্ডে ভবিষ্যতে প্রকৃতি আরও ভয়ংকর আচরণ করবে বলেও মনে করেন তারা। সাজেক পানি পরিবহন গাড়ির লাইনম্যান বিনিময় চাকমা বলেন, সাজেকে যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় ঝিরি-ঝরণার পানি শুকিয়ে গেছে। যে কারণে পানি সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এতে স্থানীয়রা ও পর্যটক ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।

পানি পরিবহনের লাইনম্যান আরও বলেন, সাজেক ভ্যালি থেকে ২১ কিলোমিটার দূরের মাচালং এলাকার কাচালং নদী থেকে দেড় হাজার লিটার পানি আনতে পরিবহন খরচ পড়ছে আড়াই হাজার টাকা। কিন্তু এইভাবে তো স্থানীয়সহ পর্যটকদের পানির চাহিদা পূরণ করা যাবে না। পানি সংকট দীর্ঘদিন থাকলে পুরো এলাকায় বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি।

পরিবেশ আন্দোলন নিয়ে কাজ করেন কাচালং সরকারি কলেজের শিক্ষক আবুল ফজল। তিনি বলেন, 'জুম চাষের নামে পাহাড়ের গাছ পালা কেটে বন উজার করে আগুন লাগানো পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। এই ভাবে যদি পাহাড়ের ওপর অত্যাচার করা হয়, তাহলে আমাদের জন্য সামনে ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে।' তিনি অবিলম্বে পরিবেশগত বিপদ এড়াতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন। শিক্ষক আবুল ফজল আরো বলেন, 'প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। স্থানীয় মানুষদের সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে। মানুষ সচেতন না হওয়ায় পাহাড়ের গাছপালা উজার হওয়ার কারণে আজকে সাজেকে পানি সংকট সৃষ্টি হয়েছে।'

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিরীন আক্তার বলেন, 'সাজেকে পানি সংকটের বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের পানিসংকট দূরীকরণে বিকল্প পানির উৎস সন্ধানের জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।'

ইত্তেফাক/এনএন