সরবরাহ কমার অজুহাতে এক দিনের ব্যবধানে এক লাফে রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম।
কৃষকের হাতে এখন পেঁয়াজ নেই। মৌসুম শেষ হওয়ায় সব পেঁয়াজ এখন মজুতদারদের হাতে চলে গেছে। এছাড়া, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। এসব কারণে, পেঁয়াজের বাজার এখন চড়া।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর শান্তিনগর, কাওরানবাজারসহ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৪০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা এক দিন আগেও ৩০ থেকে ৪৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিত্যপণ্যের বাজারদর নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে। সংস্থাটির এই প্রতিবেদনেও গতকাল পেঁয়াজের দর বাড়ার এ তথ্য জানিয়েছে। শান্তিনগর বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা কবির হোসেন বলেন, মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে গেছে। তিনি বলেন, গত সপ্তাহেও ৩০ টাকা কেজি পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই দামটা বেড়ে গেল। তবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দাম কমে আসবে।
দেশে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের মোকাম জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল এই বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের পাইকারি দর ছিল ৪৭ টাকা থেকে প্রায় ৫৪ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, এত তাড়াতাড়ি দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা নয়। আর দুই মাস পরই কোরবানির ঈদ। সেসময় বেশি দামে বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুতদাররা খুচরা বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। গত বুধবার সচিবালয়ে এক মতবিনিময় সভায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, পেঁয়াজের এখন মৌসুম সত্ত্বেও গত চার-পাঁচ দিনে প্রায় ১০ টাকা বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। তিনি বলেন, কিছু পেঁয়াজ মজুত হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পেঁয়াজের পাশাপাশি রাজধানীর বাজারে সবজির দামও বাড়তি। গতকাল বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটোল ৮০ থেকে ৯০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করল্লা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শজনে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, বরবটি ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বেগুন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগে এসব সবজি ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হয়েছে। আলু, টম্যাটোর দামে খুব বেশি হেরফের হয়নি। প্রতি কেজি আলু ৩০ টাকা, টম্যাটো ৩০ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, বৃষ্টির কারণে কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা চলতি সপ্তাহের শুরুতে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
সবজির দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কাওরানবাজারের সবজি বিক্রেতা বেলায়েত হোসেন বলেন, বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি আসা পুরোপুরি শুরু হয়নি। এ কারণে সবজির দাম বাড়তি।
এদিকে সবজির দাম বাড়তি থাকলেও বাজারে স্বস্তি মিলছে ব্রয়লার মুরগির দামে। গত দুই দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে ১০ টাকা কমে গতকাল তা ১৮০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে ডিমের দাম হালিতে দুই টাকা বেড়েছে। গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি হালি ফার্মের বাদামি রঙের ডিম ৪০ থেকে ৪৫ টাকা হালি বিক্রি হয়েছে; যা চলতি সপ্তাহের শুরুতে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এদিকে চালের দাম এখনো চড়া। এর মধ্যে মোটা চালের দাম আরেকটু বেড়েছে। গত দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে দুই টাকা বেড়ে গতকাল তা ৫০ থেকে ৫৭ টাকা বিক্রি হয়।