কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে জমে উঠেছে শ্রমিকের ভ্রাম্যমাণ হাট। জীবিকার জন্য কাজ খুঁজতে আসা মানুষের আনাগোনায় মুখরিত মনোহরগঞ্জ উপজেলার নাথেরপেটুয়া রেলওয়ে স্টেশন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকদের পাওয়া যায় এ হাটে। এ শ্রমিকদের কাজে লাগিয়ে এখানকার কৃষকরা বোরো ধান ঘরে তোলেন।
বোরো মওসুমে এলাকায় শ্রমিকের চাহিদার প্রায় ৫০ ভাগ পূরণ হয় অন্য জেলার শ্রমিক দিয়ে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার নাথেরপেটুয়া রেলওয়ে স্টেশনে কয়েকশ শ্রমিক ভার, কাস্তে ও ব্যাগ নিয়ে কাজের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে। রেলওয়ে স্টেশনের ফ্ল্যাটফর্মজুড়ে জটলাপাকিয়ে কাজের অপেক্ষা করছেন তারা।
এদের মধ্যে নানা বয়সের শ্রমজীবী মানুষ রয়েছে। শ্রমিক খুঁজতে আসা কৃষকরাও হাটে এসে পেয়ে যান তাদের কাঙ্ক্ষিত শ্রমিক। দরদাম মিললেই নিয়ে যান বাড়ি। এভাবেই চলছে এখানে শ্রম বেচাকেনা। শ্রমিকদের অধিকাংশই রাতে স্টেশনের ফ্ল্যাটফর্মে রাত্রিযাপন করার কথা জানান। কাজের সন্ধান পেলেই চলে যান মালিকের সাথে। নীলফামারীর সিরাজুল, গাইবান্ধার মালেক সরদার, লালমনিরহাটের রফিকুল, দিনাজপুরের খালেক, ঠাকুরগাঁয়ের সামছুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা হলে বোরো ধান উঠা পর্যন্ত এ এলাকায় অবস্থান করার কথা জানান। যখন যে এলাকায় কাজের চাহিদা থাকে এ হাটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মওসুমের শুরুতে কাজের খোঁজে যান তারা।
এদের অধিকাংশই কৃষিকাজ করেন। নিজের এলাকায় এ সময় কোন কাজ না থাকায় একটু বাড়তি রোজগারের আশায় তারা এ হাটে আসার কথা জানান। জনপ্রতি ৮-৯শ টাকা মাইনে পান একদিন কাজ করে। কেউকেউ ২/৩ মাস পর্যন্ত একটানা কাজ করেন। মওসুম শেষে টাকা জমিয়ে তারপর বাড়ি যান।
উপজেলার সরসপুর এলাকার কৃষক সাইদ আলী জানান, নিজেদের কর্মব্যস্ততা থাকায় বিশেষ করে বোরো মওসুমে এলাকার স্থানীয় শ্রমিক খুব একটা পাওয়া যায় না। এ মওসুমে দূরদূরান্ত থেকে আসা শ্রমিকের উপরেই ভরসা রাখতে হয়। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়ার কথা জানান তিনি।
এ শ্রমিকদের মাথাপিছু খরচ একটু বেশী হলেও কাজেও সাশ্রয় হয়, একটানা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার তুষার এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, বোরো মওসুমে এ এলাকায় শ্রমিকের চাহিদা মেটাতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকরা কাজ করছেন। শ্রমিকের চাহিদার প্রায় ৫০ ভাগ যোগান হচ্ছে বাহির থেকে আসা শ্রমিক দিয়ে।
এবার এ উপজেলায় ৯ হাজার ৯শ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের কথা জানান তিনি। আবাদকৃত জমির ৯৫ শতাংশই হাইব্রিড জাতের ধান।