হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ব্যবহার করে পাচার হতে যাওয়া গত ৬ মাসে প্রায় প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকারও বেশি এবং প্রায় ১০০ কেজি স্বর্ণ জব্দ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি দেশীয় মুদ্রাও রয়েছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত এই টাকা ও স্বর্ণ জব্দ করা হয়। বিমানবন্দর কাস্টমসের প্রিভেন্টিভের ডেপুটি কমিশনার মোঃ ইফতেখার আলম ভূঁইয়া এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের টিমের বিশেষ নজরদারিতে পাচারের হাত থেকে এই মুদ্রাগুলো রক্ষা করা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ১০০ কেজি স্বর্ণ বিভিন্ন সময়ে জব্দ করা হয়। এগুলো জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট হস্তান্তর প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিভিন্ন সময়ে স্বর্ণ ও টাকা পাচারের অন্যতম রুট হিসেবে ব্যবহার হতো। বিগত ৫ আগস্টের পর বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এই রুটে চোরাকারবারিরা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিমানবন্দর কাস্টমস থেকে শুরু করে এভিয়েশন সিকিউরিটিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা নজিরবিহীনভাবে নজরদারি জোরদার করে। বিশেষ করে মুদ্রা পাচার, সোনা পাচার রোধে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ , শুল্ক গোয়েন্দা নজরদারি অন্যান্য যে কোনও সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ করা হয়েছে।
সূত্র বলছে, এই নজরদারির মধ্যেও চোরাকারবারিরা বিভিন্নভাবে দেশি-বিদেশি মুদ্রা পাচারের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। তবে বিমানবন্দরের কঠোর নজরদারির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
কাস্টমসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকারও বেশি জব্দ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জব্দ সৌদি রিয়াল (১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫১০ রিয়াল)। এছাড়াও জব্দের তালিকায় আছে ৫৩ হাজার ৩০৫ ইউরো, ১ হাজার ৩৭০ ব্রিটিশ পাউন্ড, ৪ হাজার ৭৮৬ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৫ ইউএই দিরহাম, ৫৩০ ওমানি রিয়াল, ১০ সিঙ্গাপুর ডলার, ২১০ জর্ডান দিনার, ৪৯ হাজার ৮১৮ মার্কিন, ৫৬০ কুয়েতি দিনার, ১ হাজার ৫০ ব্রুনায়, ১০ চাইনিজ ইয়েন, ৩২০ থাই বাথ, ১৫৩ কাতার রিয়াল এবং ১০ লাখ ১৭ হাজার বাংলাদেশি টাকা।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত ৬ মাসে সবচেয়ে বেশি পাচারের চেষ্টা হয়েছে ১৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫১০ সৌদি রিয়াল। গত ২০ এপ্রিল সৌদি এক রিয়ালের বাংলাদেশি মুদ্রার হার ছিল ৩২ টাকা ৫৫ পয়সা। সেই হিসাবে বাংলাদেশি টাকায় ৪ কোটি ৭৭ লাখ ২ হাজার ৩৫০ টাকা। এরপরের অবস্থান সংযুক্ত আরব আমিরাতের দিরহাম। ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৫ দিরহামে বাংলাদেশি মুদ্রায় অর্থাৎ প্রতি দিরহামে ৩৩ টাকা ৩৪ পয়সা হারে ২ কোটি ৪৯ লাখ ৫৪ হাজার ৬১০ টাকা। মালয়েশিয়াতেও পাচারের চেষ্টা হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় ২৭ টাকা ৬০ পয়সা রেটে ১ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার ৩৬০ টাকা।
তথ্যে দেখা যায়, এই দুই দেশের মুদ্রার পাশাপাশি মার্কিন ডলার, ইউরো, পাউন্ড ও কুয়েতি দিনারের পাচার চেষ্টা করা হয়। বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি বাংলাদেশি ১০ লাখ ১৭ হাজার টাকাও জব্দ করা হয়েছে।
মাস অনুযায়ী সর্বশেষ গত মার্চে জব্দ করা হয়, ৩ লাখ ৯৬ হাজার সৌদি রিয়াল, ১৭ হাজার ৯৫০ ইউরো, ১ হাজার ৩৭০ ব্রিটিশ পাউন্ড, ৪ হাজার ৭৭১ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত। এর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে জব্দ হয় ১ লাখ ৭ হাজার ২৬০ সৌদি রিয়াল, ২ হাজার ৪৩০ ইউএই দিরহাম, ৩ কাতার রিয়াল, ৫ ওমানি রিয়াল, ১০ সিঙ্গাপুর ডলার, ২১০ জর্ডান দিনার, ১৮ মার্কিন ডলার, ৩৫ হাজার ৩৫৫ ইউরো।
অবশ্য বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে বিদেশি মুদ্রা ধরা পড়ার ঘটনা শূন্য। তার আগের মাসে ডিসেম্বরে ১ লাখ ৯২ হাজার ২৫০ সৌদি রিয়াল, ২৪০ ইউএই দিরহাম ও ১৫০ কাতার রিয়াল জব্দ করা হয়। আর নভেম্বর মাসে ৪৯ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার, ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল, ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬৫ ইউএই দিরহাম, ২৭৫ ওমানি রিয়াল, ১ লাখ বাংলাদেশি টাকা এবং অক্টোবরে ৫৬০ কুয়েতি দিনার, ৫ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ সৌদি রিয়াল, ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৮০ ইউএই দিরহাম, ২৫০ ওমানি রিয়াল, ১৫ মালয়েশিয়ান রিংগিত, ১ হাজার ৫০ ব্রুনায়, ১০ চাইনিজ ইয়েন এবং ৩২০ থাই বাথ জব্দ করা হয়।
সার্বিক বিষয়ে কথা হয় ঢাকা কাস্টমস হাউস এর কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বিমানবন্দরে কঠোর নজরদারি বাড়িয়েছি। আমরা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। সব কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। এছাড়াও এভসেকসহ অন্যান্য সংস্থাও এ ব্যাপারে সহায়তা করে। আমরা বিমানবন্দরে সব সংস্থা মিলে একটি টিমের মতো কাজ করে থাকি। আর এ কারণে চোরাচালানসহ অন্যান্য অপরাধ কমে আসছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও অন্যান্য সংস্থার সহায়তায় আমরা এ অপরাধগুলো রোধ করতে পারছি।’