চট্টগ্রামের রাউজানে মাত্র ৬০ ঘণ্টার ব্যবধানে মো. ইব্রাহীম নামে আরেক ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। কারাগারে থাকা আলোচিত ও দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে অভিযোগ তুলেছে ইব্রাহিমের পরিবার।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে রাউজান উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের গাজীপাড়া এলাকার বাজারে মাথায় গুলি করে মো. ইব্রাহীমকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে তার পরিবার। ইব্রাহীম এলাকায় ইট-বালুর ব্যবসা করতেন এবং স্থানীয়ভাবে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই এলাকার স্থানীয় একটি হোটেলে বসে চা খাচ্ছিলেন। এসময় অটোরিকশা করে আসে কয়েকজন সন্ত্রাসী। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইব্রাহীমকে লক্ষ্য করে গুলি করতে শুরু করেন তারা। এসময় আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দোকানপাট বন্ধ করে পালিয়ে যায় মানুষ।
নিহতের চাচা ও রাউজান ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সদস্য সচিব আবদুল হালিম বলেন, আমরা বাজারের জানে আলমের চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। অতর্কিতভাবে একদল সন্ত্রাসী হামলা চালায়। আমাকেও তাড়া করেছিল। পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যাই।
নিহতের স্ত্রী নুরজান বেগম বলেন, আমার স্বামী খাটে শোয়া ছিলেন। আমি তার জন্য চা তৈরি করছিলাম। এমন সময় তার মোবাইলে একটা ফোন আসে। ফোন পেয়ে তিনি বাইরে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। এর আগে রায়হান তাকে কয়েকবার ফোনে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল।
নিহতের বোন রিপু আক্তার বলেন, এখানে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের অনুসারী ও রায়হানের অনুসারীরা আস্তানা গেড়েছে। তারাই আমার ভাইকে হত্যা করেছে। আমরা সন্ত্রাসী রায়হানের ফাঁসি চাই।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভুঁইয়া ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ইব্রাহীম নামের একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করি। তার মাথার পেছনে গুলি লেগে মগজ বের হয়ে গেছে। ঘটনাস্থল হতে দুটি বুলেটের খোসা উদ্ধার করা হয়। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে রায়হান ছোট সাজ্জাদের অনুসারী। সম্প্রতি সময়ে পুলিশ রায়হানকে গ্রেপ্তার করতে কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করে। এতে রায়হান এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর ইব্রাহীম এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেন। এই নিয়ে সন্ত্রাসী রায়হানের সাথে নিহত ইব্রাহীমের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ নিয়ে রায়হান ইতোমধ্যে ইব্রাহীমকে কয়েকবার হুমকি দেন। তবে ইব্রাহীমকে হত্যার ঘটনায় কারা জড়িত তা শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত গত ১৯ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত সাড়ে ১২ টায় রাউজান উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের গরীবুল্লাহ পাড়ার ভান্ডারী কলোনীতে রাতের ভাত খাওয়ার সময় ঘরে ঢুকে মো. আব্দুল্লাহ মানিক নামক যুবদলকর্মীকে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ৬০ ঘণ্টার মাথায় আরেকজন খুন হন।
এর আগে গত ৩০ মার্চ গভীর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া এক্সেস রোড এলাকায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে খুন হন দুজন। পরে পুলিশি তদন্তে বেরিয়ে আসে কারাগারে বন্দি থাকা ছোট সাজ্জাদের নির্দেশেই চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সবশেষ ১ এপ্রিল সন্ধ্যায় নগরের বাকলিয়া থানায় খুনের স্বীকার বখতেয়ার উদ্দিন মানিকের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ ও তার স্ত্রীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।