সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

কুয়েটের প্রশাসনিক ভবনে সিন্ডিকেটের সভা, বাইরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৪৬

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উদ্ভূত ও পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট সভা শুরু হয়েছে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনে সভা শুরু হয়। কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাছুদ সভায় সভাপতিত্ব করছেন।

সভাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দিচ্ছে।
এদিকে, শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার পরও ১দফা দাবিতে অনড় রয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসে যান শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। তিনি বারবার অনুরোধ করলেও ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

এসময় উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতি শিগগির কমিটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবে। তাড়াহুড়ো করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। আইন অনুযায়ী সবকিছু করতে হবে।

অপরদিকে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা দুই মাস ধরে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু আমাদের দাবি মানা হচ্ছে না। আমরা এই বিষয়ে আর সময় দিতে চাই না। আমরা লাশ হয়ে গেলেও ভিসির পদত্যাগ ছাড়া অনশন ভাঙব না।

আলোচনার পর ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন শিক্ষা উপদেষ্টা। এসময় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার ও জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম সঙ্গে ছিলেন।

অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে মঞ্জুরি কমিশনের প্রতিনিধি দল বেলা ১১টায় স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, আমরণ অনশন কর্মসূচিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে আরো ৪ শিক্ষার্থী। এ নিয়ে অনশনে ৯ শিক্ষার্থী অসুস্থ হলেন। এছাড়া ২ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে বাড়িতে নিয়ে যায় তাদের পরিবার।

গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে টানা অনশনরত অন্য ২১ শিক্ষার্থীও শারীরিকভাবে আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে। বুধবার সকাল থেকে কুয়েটের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। ক্যাম্পাসের ফটকগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হচ্ছে।

একাত্মতা জানিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ:-

কুয়েটের অনশনরত শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টায় নগরীর শিববাড়ী মোড়ে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

খুলনা নাগরিক সংগঠন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইনকিলাব মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন এ কর্মসূচির আয়োজন করেন। একই সময়ে কুয়েট ভিসির পদত্যাগ ও শিক্ষার্থীদের এক দফা সমর্থনে সকাল ১০টায় নগরীর শিববাড়ি মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন দ্য রেড জুলাই নামের একটি সংগঠন।

ছাত্রদল যা জানালো: খুলনা মহানগর ও জেলা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, কুয়েটে দাবি দাওয়া বাস্তবায়ন নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে যে আন্দোলন চলছে, তার সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোন সম্পর্ক নেই। কুয়েটে গুটি কয়েক ছাত্র সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশেষ মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের লক্ষ্য, কুয়েটকে বিতর্কিত করা, মেধা শুন্য করা। কুয়েটে ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। অথচ মাত্র ৩০ থেকে ৩২জন ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় আছে। এরা কোন ভাবেই ৫ হাজার শিক্ষার্থীদের পক্ষে প্রতিনিধি হতে পারে না। 

তারা আরও জানায়, সাধারণ ছাত্রদের নামে একটি গোষ্ঠী চলমান আন্দোলনের নামে অহেতুক কুয়েটের সুনাম নষ্ট করতে ও লেখাপড়া ব্যাহত করতে পরিকল্পিতভাবে বিশেষ এজেন্ডা নিয়ে মাঠে নেমেছে। গত মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল বিকালে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে হত্যার প্রতিবাদ ও হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল পুর্ব সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। খুলনা মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সদস্য সচিব মো. তাজিম বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং গোলাম মোস্তফা তুহিনের পরিচালনায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব অ্যাকাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে ‘লাল কার্ড’ দেখান শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। তারপর ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।

এদিকে, ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর গত ১৩ এপ্রিল থেকে ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। এছাড়া গত সোমবার বিকেল ৪টা থেকে আমরণ অনশনে বসেন।

ইত্তেফাক/এএইচপি