বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়ে সামাজিক গণমাধ্যমসহ সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ খুলেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন তিনি। এ
কই দিন উপদেষ্টার বাবা স্কুলশিক্ষক মো. বিল্লাল হোসেনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার নামে করা দুইটি ঠিকাদারি লাইসেন্স বাতিল করেছে এলজিইডি ও জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে উপদেষ্টা আসিফের বাবা বলেছেন, ‘ছেলের সম্মতি ছাড়াই লাইসেন্স দুটি করা হয় এবং এখন তিনি বিব্রত।’
উপদেষ্টা আসিফ তার পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রথমেই আমার বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। বুধবার রাত ৯টার দিকে একজন সাংবাদিক কল দিয়ে আমার বাবার নামে ইস্যুকৃত ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চান। বাবার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হলাম তিনি জেলা পর্যায়ে (জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার এর কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত) একটি লাইসেন্স করেছেন। বিষয়টি সাংবাদিককে নিশ্চিত করলাম।
তিনি পোস্ট করলেন, নিউজও হলো গণমাধ্যমে। নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, তাই ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। আমার বাবা একজন স্কুলশিক্ষক। আকবপুর ইয়াকুব আলী ভুঁইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বাবাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তার কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যে কোনো ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যে কোনো লাইসেন্স করতেই পারে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে। বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেননি, সেজন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’
নিয়ম মেনেই লাইসেন্স দুটি করা হয়
কুমিল্লা এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপদেষ্টা আসিফের বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ মার্চ এলজিইডি থেকে ‘মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ’ এর নামে একটি লাইসেন্সের অনুমোদন দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে এলজিইডি কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল মতিন সাংবাদিকদের বলেন, এখনো এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেলার কোনো এলজিইডির কার্যালয়ে দরপত্রে অংশ নেয়নি, সকল বিধি মেনেই তিনি (বিল্লাল হোসেন) লাইসেন্স পেয়েছিলেন। আজ তিনি আবেদন করায় লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়।’
এছাড়া কুমিল্লা জেলা পরিষদের নথি থেকে জানা যায়, গত ৯ মার্চের জেলা পরিষদের মাসিক সভায় ‘মেসার্স ইসরাত এন্টারপ্রাইজ’ এর নামে লাইসেন্সের অনুমোদন দেওয়া হয়। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, পরিষদের মাসিক সভায় ঐ ঠিকাদারি (ইসরাত এন্টারপ্রাইজ) লাইসেন্স অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আবার বাতিলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে তা বাতিল করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টার বাবা মো. বিল্লাল হোসেন গতকাল বিকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশে এর আগে অনেক মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা ঠিকাদারি লাইসেন্স করে কাজ করেছে। তবে আমার ছেলেকে (আসিফ) না জানিয়ে লাইসেন্স করাটা ভুল হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এমন সমালোচনা হবে চিন্তা করিনি। এ নিয়ে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যেহেতু দুটি লাইসেন্সই বাতিল করা হয়েছে, তাই এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়।’