‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন'—লাইনটির বাংলা অর্থ 'তুমি কখনো একা হাঁটবে না। নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২০তম প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা জয়ের পর অ্যানফিল্ড স্লোগানটিতে মুখরিত ছিল। ১৮৮০ সালে শহরের মযার্দা পাওয়ার পর ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় লিভারপুল ফুটবল ক্লাব। ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপনে ১৯৯২ ক্লাবটির লিগোতে ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন'—লাইনটি যুক্ত করা হয়েছিল। লাইনটির মতোই কখনো একা হাঁটতে হয়নি লিভারপুলের।
লিভারপুল যখন আজকের দ্য রেডর্স হয়ে ওঠেনি তখন থেকে ভক্তরদের নিঃস্বার্থ সমর্থক-ভালোবাসায় একটি সাধারণ ক্লাব থেকে হয়ে উঠেছে ইংলিশ ফুটবলের সাম্রাজ্যের রাজা। ম্যানচেস্টার ইউনাইডেটের সঙ্গে যৌথ্যভাবে সর্বোচ্চ প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা এখন তাদের দখলে।
টটেনহ্যামের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে লিভারপুলের সমীকরণ ছিল, ম্যাচটিতে হার এড়ালে শিরোপা উল্লাস করবে তারা। যা সালাহ-ম্যাক অ্যালিস্টারের জন্য খুব কঠিন কাজ ছিল না। যার কারণে অ্যানফিল্ডে শিরোপা উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন লিভারপুল সমর্থকরা। ৬১ হাজার ধারণক্ষমতা সম্পূর্ণ অ্যানফিল্ডে ছিল না তিল ধরার ঠাঁই। যেন লাল জার্সিতে ‘লাল সমুদ্রে’ পরিণত হয়েছে গোটা স্টেডিয়াম। ম্যাচের শুরুতে পিছিয়ে পরে ও টটেনহ্যামের জালে গোল উৎসব করে ৫-১ গোলে হারিয়ে চার ম্যাচ হাতে রেখে প্রিমিয়ার লিগের নিশ্চিত করে আর্নে স্লটের দল। দুর্দান্ত মৌসুম কাটানোর পর সমর্থকদের সঙ্গে শিরোপা উল্লাসে মেতে ওঠেন কোচ-খেলোয়াড় থেকে শুরু করে কোচিং স্টাফের সদস্যরা।
শুধু যে স্টেডিয়ামে ভেতরে চলেছে শিরোপা উল্লাস তা হয়, গোটা লিভারপুল শহর যোগ দেয় উদ্যাপনে। ক্লাবের জার্সি গায়ে চাপিয়ে স্টেডিয়ামের বাইর থেকে রাজপথ সবই ছিল পাগলাটে সমর্থকদের দখলে। পুরো শহরই রূপান্তরিত হয়ে লাল সমুদ্রে।
জার্মান কিংবদিন্ত কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ দ্য রেডর্সদের দায়িত্ব ছাড়ার পর মৌসুমের শুরুতে লিভারপুলের দায়িত্ব নেন আর্নে সল্ট। সব প্রতিকূল আবাহওয়াকে পাশ কাটিয়ে পাঁচ বছর পর দলকে এনে দেন প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি। শিরোপা বিলাসে খেলোয়াড়দের মতোই সময়টা উপভোগ করেন শর্ট। নেচেগেয়ে মাতিয়ে রাখেন গোটা অ্যানফিল্ড। তার কাজে নিজের অনুভুতি জানতে চাইলে বলেন, 'আর কী বলার আছে? অবিশ্বাস্য! এই মুহূর্ত থেকে আমি এই মহান ফুটবল ক্লাবের ইতিহাসের অংশ।’
এছাড়াও তিনি লিভারপুলের সাফল্যের সবার প্রতি নিজের শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন। বলেন, 'অবিশ্বাস্যভাবে গর্বিত, কেবল খেলোয়াড়দের জন্য নয় বরং এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের জন্য, ক্রীড়া পরিচালকদের জন্য, আমার কর্মীদের জন্য, আমাদের তাদের জন্য একটি বিশাল করতালি দেওয়া উচিত।' তখন করতালি মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা অ্যানফিল্ড।
চলতি মৌসুমে দ্য রেডর্সদের গল্পের মহানায়ক মোহাম্মদ সালাহ। সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে দলকে শিরোপা জয়ের স্বাদ দেওয়ার পাশাপাশি নিজে বসেছেন রাজার সিংহাসনে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের কিংবদন্তি সাজিও আগুয়েরার রেকর্ড ভাঙলেন ৩২ বছর বয়সি এই মিশরীয়। এতদিন ১৮৪ গোল করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ গোলদাতার আসন ছিল সাবেক ম্যানসিটির তারকার দখলে। তবে টটেনহ্যামের বিপক্ষে গোল করে আগুয়েরার রেকর্ড ভাঙেন মোহাম্মাদ সালাহ।
এমন ঐতিহাসিক দিনে সমর্থকদের ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি। অথচ কিছুদিন আগেও রব উঠেছিল ক্লাব ছাড়ছেন তিনি। ট্রফি জয়ের পর সমর্থকদের আলাদা ভাবে সময় কাটান সাহাল। তোলেন সেলফি। জানান, ভক্তদের সামনে লিগ শিরোপা জেতা একটু বেশিই বিশেষ। বলেন, 'ভক্তদের সামনে প্রিমিয়ার লিগ জেতা সত্যিই বিশেষ কিছু। এটি পাঁচ বছর আগের চেয়ে অনেক বেশি আনন্দের, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পাঁচ বছর পর আবার এভাবে শিরোপা উল্লাস করব। এটি আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অনুভূতি।’