ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের দারুস সালাম থানার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সচিব শান্তনু হোসেন রুবেলকে (৩৩) স্পর্শকাতর মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। জুলাই আগস্ট আন্দোলন চলাকালে তিনি কারাবন্দী থাকলেও তাকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তারের জন্য আবেদন করেছে পুলিশ।
রুবেলের পরিবারের সদস্যরা জানান, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের আগে পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার শুরু করে। এই অভিযানে গত ৭ জুলাই মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থান সংলগ্ন একটি বাড়ি থেকে রুবেলকে আটক করে পুলিশ। পরে তার কাছ থেকে ৩শ গ্রাম হেরোইন উদ্ধারের গল্প সাজিয়ে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। ওই মামলায় তাকে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন আদালত। এরপর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাদক মামলার কারণে তিনি আর জামিন পাননি। এরই মধ্যে সম্প্রতি সময়ে পুলিশ তাকে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহতের ঘটনায় মিরপুর থানায় দায়ের করা হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। অথচ গত ৭ জুলাই থেকেই রুবেল পুলিশের দেওয়া মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন।
এদিকে আদালতের সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করেন মিরপুর মডেল থানার এসআই আবদুল্লাহ আল মামুন।
ওই আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, ‘২০২৪ সালের ৭ জুলাই মাদক মামলায় রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে জেলহাজতে আটক আছে। তাকে পুনঃগ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হচ্ছে। গত ২০ জুলাই দুপুরে মিরপুর-১০ এলাকায় মো. কবির ও তার শ্যালক সিরাজ নামে দুজন ভ্যানগাড়িতে কাপড় বিক্রয় করছিলেন। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা রাইফেল, বন্দুক, পিস্তল দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সাধারণ ছাত্রদের ওপর গুলি করলে কবির ও সিরাজের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রাবার বুলেট লাগে। তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। কবির ও সিরাজকে ওই সময়ই মারধর করে গুরুতর জখম করা হয়। ঘটনায় কবির বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এবং দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৬১ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।’
আবেদনে আরও উল্লেখ করেন, প্রাথমিক তদন্তে উল্লেখিত আসামির এ মামলার ঘটনায় জড়িত থাকার সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। আসামিসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনের ক্যাডাররা বেপরোয়াভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আক্রমণ করে ও তাদের নির্বিচার এলোপাতাড়ি গুলিতে মামলার বাদী কবির আহত হন এবং আসামিদের রাইফেল, বন্দুক ও পিস্তলের গুলিতে বাদীর শ্যালক সিরাজ বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় আসামির (রুবেল) যথেষ্ট ভূমিকা ছিল বলে জানা যাচ্ছে।
মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসামিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো প্রয়োজন এবং ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হতে পারে। তাই আসামিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জেলহাজতে আটক রাখা প্রয়োজন।
রুবেলের আইনজীবী খলিলুর রহমান খলিল বলেন, ‘একের পর এক পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে রুবেলকে বারবার ফাঁসানো হচ্ছে। মিথ্যা মাদক মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে আবেদন করেছে। তাছাড়া আরও দুটি পুরানো মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।’
রুবেলের বাবা বাবুল মিয়া বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে কবির ও সিরাজকে আহত করার অভিযোগ করা হয়েছে। তখন তো রুবেল কারাগারে ছিল। কারাগার থেকে বের হয়ে আমার ছেলে কিভাবে তাদের ওপর গুলি করলো?
মিরপুর মডেল থানার এসআই আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘রুবেলকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় পুনঃগ্রেপ্তার চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আদালত এর পক্ষে-বিপক্ষে রায় দেবেন। কেউ উপস্থিত থেকে হামলা করেন আবার কেউ কারাগারে থেকেও হামলার পরিকল্পনা করেন। এখানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে আদালতে আবেদন করতেই পারি।'