রোববার, ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

অপরিকল্পিত বাড়ী-ঘর নির্মাণে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি

আপডেট : ০৭ মে ২০২৫, ১৮:০২

রাজারহাটে অপরিকল্পিত ভাবে নতুন বাড়ি ঘর নির্মাণের ফলে আশংকা জনক হারে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। পৌরসভা বা জেলা শহরে বাড়ি নির্মাণে প্লানসহ অনুমতি প্রয়োজন হলেও গ্রামাঞ্চলে বাড়ি নির্মাণে কোন বিধি নিষেধ পালনে কঠোরতা না থাকায় সর্বত্র ফসলি জমি ভরাট করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ চলছে।

জানা গেছে, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৬৩টি গ্রামে প্রতি বছর আবাদি জমির উপর শতশত বাড়ী ঘর তৈরি হচ্ছে। গত ১০বছর পূর্বেও গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাটের দু’ধারে বিস্তীর্ণ এলাকায় ছিল শুধু জমি আর জমি। এখন তা নেই। এমনকি বিল, জলাশয় ও প্লাবন ভূমি পর্যন্ত ভরাট করে নির্মিত হচ্ছে বাড়িঘর।

জানা যায়, উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল হরিশ্বর তালুক মৌজার দেউলার বিল নামে একটি ফসলের মাঠে  আনুমানিক ২৫বছর পূর্বে ৫শতাধিক একর আবাদি জমি ছিল। কৃষকরা সেখানে ধান,পাট সহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করতো। বর্ষাকালে পানি আর শুকনো মৌসুমে জমির আইল ছাড়া ভর দুপুরে রোদে ছায়ায় জুড়ানোর মতো কোন গাছও ছিল না। তবে এখনকার চিত্র ভিন্ন। দেখে বোঝার উপায় নেই, এই দেউলার বিলটি এক সময় শুধুই ফসলের মাঠ ছিল। ২৫ বছরের মধ্যে সেখানে দুই সহস্রাধিক পরিবার ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে মানুষ বসবাস করছে। মানুষের যাতায়াতের জন্য তৈরি হয়েছে একাধিক কাঁচা-পাকা সড়ক ও বাড়ি সংলগ্ন পুকুর। প্রতি বছর তৈরি হচ্ছে শতশত নতুন ঘর-বাড়ি।

একইভাবে ভাবে উপজেলার চাকিরপশার বিল, ইটাকুড়ির দোলা, ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা বিল, জুগিদাহ বিল, উকিলের ছড়া, খাউরিয়ার দোলা, বেদারজাল, জোকমারীর দোলা সহ প্রায় ছোটবড় ৩০টি বিল, জলাশয় ও প্লাবনভূমিতে বর্ষাকালে মাছ ও শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষাবাদ হতো। এখন এগুলো সংকোচিত হয়েছে। চারধারে ভরাট করে মানুষ গড়ে তুলেছে বসত বাড়ি,দোকান পাট ও হাট বাজার।   

চাকিরপশার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে বাড়িঘর করার নিয়ম থাকলেও তা কেউ মানেন না, বরং অনেক সময় দেখা যায় ব্রিজ, কার্লভার্টের মুখ বন্ধ করেও বাড়িঘর করেন। ফলে কেউ নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করায় এবং খেয়াল-খুশি মতো বসত বাড়ি নির্মাণ করায় ফসলি জমি কমে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এটিএম রিয়াসাদ বলেন, ২০২২সনের জনশুমারী ও গৃহগণনা অনুযায়ী রাজারহাট উপজেলার জনসংখ্যা ২লক্ষ ৩হাজার ৪৮জন। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জনসংখ্যা সহ বিভিন্ন বিষয়ের তথ্য সরবরাহ করি। তবে কৃষি জমির সঠিক তথ্য উপজেলা কৃষি অফিস জানেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুন্নাহার সাথী বলেন, গত ৫বছর পূর্বে রাজারহাট উপজেলায় ১৪ হাজার ৪ হেক্টর ফসলি জমি ছিল, ৫ বছরে কমেছে ৩৫১ হেক্টর ফসলি জমি। বর্তমানে ১৩ হাজার ৬৫৩ হেক্টর ফসলি জমি রয়েছে। এসব তথ্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ির উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এসব তথ্য জানা থাকলেও আমাদের করার কিছু নেই বা কারো বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা আমাদের দেওয়া হয়নি।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসাদুল হক বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী ফসলি জমিতে বাড়িঘর করার ক্ষেত্রে অনুমতি নেয়ার নিয়ম থাকলেও কেউ অনুমতি চান না, কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বললেও পরে জানান, আমাকে দেখা লাগবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ আছে কিনা। তবে কেউ শ্রেণী পরিবর্তন করে থাকলে বাস্তব অবস্থা দেখে বসতভিটার ক্ষেত্রে বসত ভিটা,ফসলি জমির ক্ষেত্রে ফসলি জমির উপর কর আদায় করার সুযোগ রয়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল ইমরান বলেন, নতুন বসত ভিটা স্থাপনের ক্ষেত্রে ভূমি অফিসের মাধ্যমে জমির শ্রেণী পরিবর্তনের জন্য আবেদন করার পর জেলা প্রশাসকের অনুমোদন সাপেক্ষে নতুন বসতভিটা স্থাপনের বিধান রয়েছে। তবে এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে বসতবাড়ি স্থাপনের বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি।

ইত্তেফাক/এএইচপি