নেত্রকোনার পূর্বধলায় এক গৃহবধূকে (১৮) শ্লীলতাহানির ঘটনায় ছাত্রদল নেতা মো. সালমান রহমান পল্লবসহ জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মো. রফিকুল ইসলাম মাদানী।
বুধবার (৭ মে) রাত ৮টা দিকে পূর্বধলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান তিনি। এর আগে সন্ধ্যায় নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহাবুব চৌধুরী ছাত্রদলের বিতর্কিত ওই নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের কথা জানান।
সালমান রহমান পল্লব নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি উপজেলার গোহালাকান্দা ইউনিয়নের গোহালাকান্দা গ্রামের মোফাজ্জল হোসেনের ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে মাদানী বলেন, আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। শ্লীলতাহানির ঘটনায় জড়িত পূর্বধলা উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সালমান রহমানসহ দায়ীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।
এর আগে দুপুর ৩টা দিকে ওই নারীকে শ্লাতাহানির অভিযোগে নেতা সালমান রহমান পল্লবের বিরুদ্ধে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন মাদানী। সেখানে তিনি লিখেন, ‘আমি স্তব্ধ, বাকরুদ্ধ— বলার মতো কোনো ভাষা নেই। এসব কথার কারণে আওয়ামী লীগের লোকজন হয়তো হাসাহাসি করবে, কিন্তু বাস্তবতা ত এড়িয়ে যাওয়া যাবে না! আমার এক চাচাতো ভাই তার ভাতিজিকে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিল। সে নিজে প্রাইভেটকার চালক, আর মেয়েটি পিছনের সিটে শুয়ে ছিল। মেয়েটি বিবাহিত। পথে পূর্বধলা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পল্লব ও তার দলবল মিলে শ্যামগঞ্জ বাজারে রাতে ২০-২৫ জনের একটি দল গাড়ি থামিয়ে টেনে হিঁচড়ে মেয়েটিকে নামিয়ে শ্লীলতাহানি করে। তারা মেয়েটিকে চড়থাপ্পড় মারে এবং জোরপূর্বক নিয়ে যায়। আমার ভাই তাদের থামাতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়। মেয়েটিকে প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় যোগাযোগ করি..’
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে নেত্রকোনা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অনিক মাহবুব চৌধুরী বলেন, সালমান রহমানের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় কেন্দ্রীয় কমিটি তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করেছে। একই সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে কোনো রকম সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই গৃহবধূর বাবার বাড়ি পূর্বধলার ঘাগড়া ইউনিয়নে। তিনি স্বামীসহ রাজধানী ঢাকায় থাকেন। কয়েক দিন আগে তিনি বাবার বাড়ি গিয়েছিলেন। তার চাচা রাজধানীতে অ্যাম্বুলেন্স চালান। গত মঙ্গলবার বিকেলে তার চাচা সেখান থেকে রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে নেত্রকোনায় আসেন। পরে রোগীকে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে রাতে ওই নারীকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে রাজধানীতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সটি উপজেলার বিরিশিরি-শ্যামগঞ্জ সড়কের কুমুদগঞ্জ মোড় এলাকায় পৌঁছালে সালমান রহমানের নেতৃত্বে কয়েকজন যুবক তাদের থামান। এ সময় তার নির্দেশে অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে ওই নারীকে নামিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অন্য যুবকেরা। এ সময় বাধা দিলে ওই নারী ও তার চাচাকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়।
পূর্বধলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ নূরুল আলম বলেন, ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে এ বিষয়ে মো. সালমান রহমান পল্লবসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান।