ম্যাচের তখন অতিরিক্ত সময়ের খেলা চলছিল। সান সিরোতের গ্যালারিতে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ইন্টারের সমর্থকরা। ততক্ষণে অনেকের চোখ ভিজে গিয়েছে অশ্রুতে। নিশ্চিত হার জেনে ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে স্টেডিয়াম ত্যাগ করেছেন অনেক স্বাগতিক সমর্থকরা। তখনই দৃশ্যপটে আগমন ঘটে ফ্রান্সেস্কো এসেরবির। ডিফেন্স লাইন থেকে উঠে এসে সেজনিকে ফাঁকি দিয়ে খুঁজে নেন জাল। বনে যান গল্পের নায়ক। সান সিরোতে গ্যালারি থেকে ভেসে আসতে থাকে ফ্রান্সেস্কোর নামে জয়ধ্বনি।
অথচ এই ফ্রান্সেস্কো অনেকটা সময় লড়াই করেছেন প্রাণঘাতী ক্যানসারের সঙ্গে। তাও একবার নন, দুই-দুইবার। তবে হার না মেনে নিজের ওপর বিশ্বাস রেখে ফিরেছেন তিনি। সেই হার না মানার মানসিকতা থেকে শুরু, সবশেষ সান সিরোতে জয়। ২০১৩ সালে যখন চিভোভেরোনা ছেড়ে সিরি 'আ' লিগের দ্বিতীয় সারির দল সাসুওলোতে যোগ দিয়েছিলেন ফ্রান্সেস্কো এসেরবি। তার আগের মৌসুমে এসি মিলানের হয়ে খেলেছেন এই ডিফেন্ডার। তবে সেসময় নিজের বাবাকে হারান তিনি।
এছাড়াও অসুস্থতার কারণে ক্লাবটিতে দীর্ঘায়িত হয়নি তার ক্যারিয়ার। খেলেছেন মাত্র ৬ ম্যাচ। বাবা হারানোর শোক কাটিয়ে ওঠার পর ২০১৩ সালে গ্রীষ্মকালীন দলবদলে সাসুওলোয় যোগ দেন তিনি। ক্লাবটিতে যোগ দেওয়ার পর তার শরীরে ধরা পড়ে টেস্টিকুলার ক্যানসার। প্রথমবার ক্যানসার জয় করার পর একই বছরের শেষের দিকে আবারও প্রাণঘাতী ক্যানসার পুনরায় বাসা বাঁধে তার শরীরে। দ্বিতীয়বারের মতো ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার পর নিজেও হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন কিছুটা। সেসময় অসুস্থতায় এবং হতাশার কারণে ফুটবলও ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করেছিলেন তিনি। তবে অদম্য মানসিকতা এবং
ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা তাকে ফিরিয়েছে সবুজ গালিচায়।
ক্যানসারে আক্রান্ত দিনগুলো নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে ফ্রান্সেস্কো বলেছেন, 'আমি নিজেকে বারবার বলছিলাম 'আমার ভয় নেই'। তখন ক্যানসারের বিষয়ে শুধু আমি নিজে জানতাম। কিন্তু তারপর বুঝতে পেরেছিলাম এই ভাবে থাকা অসম্ভব। আমি এটি নিজের ভিতরে লুকিয়ে রেখেছিলাম। এখন মাঝে মাঝে আমি ভাবি। যদি এটি তৃতীয়বারের মতো ফিরে আসে। যদি এটি ঘটে, তবে জয়ের জন্য এটি আরেকটি চ্যালেঞ্জ হবে।'
ক্যানসার জয় করার পর ২০১৪ সালে ইতালি জাতীয় দলে অভিষেক হয় এই ডিফেন্ডারের। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলেছেন ৩৪ ম্যাচ। ২০২৩ সালে বিদায় জানিয়েছেন জাতীয় দলকে। এখন বাকি সময়টা ফুটবল উপভোগ করতে চান তিনি।