রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এলাকার অভ্যস্তরে প্রতিদিনই চলছে মিছিল, মিটিং, সমাবেশ ও মানববন্ধন। প্রকল্প এলাকায় রয়েছে নিউক্লিয়ার ফুয়েল (ইউরেনিয়াম)। যেকারণে কেপিআইভূক্ত প্রকল্প এলাকা চরম স্পর্শকাতর। প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহের বিষয়টি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে কাজের অগ্রগতি এবং নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একটি বড় অংশ গত কয়েকদিন ধরে প্রকল্প এলাকায় আন্দোলনে নেমেছেন। ২৮ এপ্রিল থেকে চলছে আন্দোলন। প্রকল্প এলাকা ছাড়াও গত ৬ মে বিকেল এনপিসিবিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করে উপজেলা সদরে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া উপস্থাপন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক ফাহিম শাহরিয়ার।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, প্রায় এক দশক আগে এনপিসিবিএল গঠিত হয়েছে। কিন্তু এখনো সার্ভিস রুল প্রকাশ হয়নি। নেই কোনো অর্গানোগ্রাম। দায়িত্বের সুস্পষ্ট বণ্টন ও পদোন্নতি নেই। বেতন বৈষম্য ও সুযোগ-সুবিধা থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এতে ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে। শৌচাগার, স্বাস্থ্য ও মানবিক সুব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়নি। কর্মীরা এতে করে প্রতিদিন দুর্ভোগের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশেষ করে নারী শ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার। আন্দোলনকারীরা এ সময় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জাহেদুল হাছানের অপসারণ দাবি করেন।
খুবই ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প এলাকায় এসব কর্মকাণ্ড কোনক্রমেই করা উচিত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (৮ মে) ইত্তেফাককে তিনি বলেন, চরম স্পর্শকাতর ও নিরাপত্তা বিশিষ্ট নিউক্লিয়ার প্লান্ট এলাকায় এ ধরণের কর্মসূচি পালনের নজির বিশ্বে কোথাও নেই। এ ধরণের কালচার এখানে শুরু হলে এ কেন্দ্র চালানো বিপদজনক হয়ে যাবে। সেফটি কালচার, সিকিউরিটি কালচার, কোড অব কন্ট্রাক্ট সবকিছু মেনে চলতে হবে। আন্দোলনরতদের সঙ্গে যদি কোনো বৈষম্য হয়ে থাকে সেটারও নিরসন করতে হবে। তাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো পূরণের জন্য ম্যানেজমেন্টকে এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে মঙ্গলবার (৬ মে) রাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে এনপিসিবিএলের সচিব এস আব্দুর রশিদ স্বাক্ষরিত ই-মেইলে বলা হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি ‘১ক’ শ্রেণিভুক্ত কেপিআই (গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা)। তাই প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রকল্প এলাকা বা সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় সকল প্রকার শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে এবং যাতে কোনো প্রকার শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড সংঘটিত না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক, সচেতন থাকতে হবে। তবে এই নোটিশ পাওয়ার পরও বুধবার ও বৃহস্পতিবার প্রকল্প এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পের এক সিনিয়র কর্মকর্তা স্পর্শকাতর প্রকল্প এলাকায় এ ধরনের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত জানিয়ে বলেন, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের মতো মিছিল-মিটিং হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি এবং গ্রিডলাইন প্রস্তুত না হওয়ায় এমনিতেই প্রকল্প চালু করে গ্রিডলাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ অনেক পিছিয়েছে। দ্রুত প্লান্টের নির্মাণ কাজ শেষ করার আপ্রাণ প্রচেষ্টা চলছে। যেকারণে অনেক সুযোগ-সুবিধার দিকে কর্তৃপক্ষ নজর দিতে পারেননি।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মো. জাহিদুল হাসান আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, মাত্র চার মাস ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নিয়েছি। এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রমোশন, বাড়িভাড়া বৃদ্ধি, গ্রেড বৃদ্ধি, সার্ভিস রুলসহ নানা দাবি তুলেছেন।
তিনি বলেন, আমরা কনস্ট্র্রকশন প্লান্টে কাজ করি। সকল দাবি-দাওয়া এককভাবে বাস্তবায়নযোগ্য নয়। এগুলো সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত সাপেক্ষ বিষয়। এনবিপিসিএল নতুন কোম্পানি হওয়ায় এবং দেশে পারমানবিক স্থাপনা না থাকায়, সার্ভিস রুলসের মত বিষয়গুলো সমাধানে জটিলতা তৈরি হয়, তাই বিলম্বিত হয়েছে। দায়িত্ব পাওয়ার পর অফিসের বসার স্থান সংকট, নামাজের জায়গা, নতুন কম্পিউটার ক্রয়, এবং নিরাপত্তা সরঞ্জাম সংক্রান্ত টেন্ডার প্রক্রিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।