গাজায় ১৯ মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েলের আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। এ সময়ে দখলদার বাহিনী অঞ্চলটিতে ১ লাখ টনেরও বেশি বিস্ফোরক ফেলেছে, যার একটি বড় অংশ এখনো অবিস্ফোরিত রয়ে গেছে। গাজায় হামলায় এখন পর্যন্ত ৬২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত বা নিখোঁজ হয়েছেন।
লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটর, তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৮ মে) গাজার সরকারি জনসংযোগ বিভাগ এক বিবৃতিতে এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি গণহত্যা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৯২৬টি গণহত্যা হয়েছে ফিলিস্তিনি পরিবারের সদস্যদের লক্ষ্য করে, যা ২ হাজার ২০০টি পরিবারকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ইসরায়েলি হামলায় এখনো প্রায় ১০ হাজারের বেশি মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। গাজার হাসপাতালগুলোতে তৈরি সাতটি গণকবর থেকে এখন পর্যন্ত ৫২৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী কবরস্থানগুলোও টার্গেট করে ২ হাজার ৩০০ মরদেহ চুরি করেছে।
গাজার স্বাস্থ্যখাতের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, যুদ্ধের কারণে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভেঙে পড়ায় ও জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ফলে ২১ লাখেরও বেশি মানুষ সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৭১ হাজারের বেশি মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত।
ধর্মীয় ও মানবিক অবকাঠামোর ধ্বংসযজ্ঞের কথাও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। তাতে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলায় ৮২৮টি মসজিদ সম্পূর্ণ এবং ১৬৭টি আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। টার্গেট করা হয়েছে তিনটি গির্জা এবং ১৯টি কবরস্থানও।
ক্ষুধার নীতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ইসরায়েল ৬৬টি ত্রাণকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে ২৯টি ফুড কিচেন এবং ৩৭টি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র ছিল। এছাড়া ইসরায়েল দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে সীমান্ত ক্রসিংগুলো বন্ধ রেখে ৩৭ হাজারেরও বেশি ত্রাণ ও জ্বালানিভর্তি ট্রাকের প্রবেশে বাধা দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গত নভেম্বরে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। একইসঙ্গে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।