বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

অগ্নিঝুঁকিতে নারায়ণগঞ্জের অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো

নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, মানা হয় না বিল্ডিং কোড

আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ১৬:৪১

অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জে আবাসিক ভবনে নির্মিত অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো। আবাসিক ভবনে বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণে নিষেধ থাকলেও তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। বহুতল ভবনে একাধিক সিঁড়ি স্থাপনের বিধিমালা থাকলেও তা মানে না ভবন মালিকরা। ঐসব আবাসিক বহুতল ভবনগুলোকে বাণিজ্যিক ভবনে রূপান্তরিত করা হলেও বেশির ভাগ বহুতল ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপক সরঞ্জাম। 

এক বছর আগে রাজধানীর বেইলী রোডে একটি অনুমোদনহীন বাণিজ্যিক ভবনের রেস্টুরেন্টে আগুন লেগে ৪৬ জনের মৃত্যুর পরে দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। ঐ ঘটনার পরে নারায়ণগঞ্জেও রেস্তোরাঁগুলোতে নানা অনিয়মের চিত্র ফুটে উঠে। বেশ কিছুদিন প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। তবে কিছুদিন যেতে না যেতে আবারও আগের চিত্রই বিরাজ করতে থাকে। এরই মধ্যে গত সোমবার রাতে রাজধানীর বেইলী রোডে আবারও একটি রেস্টুরেন্ট ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। রেস্তোরাঁয় ভোজন বিলাসীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মিত বহুতল ভবনসমূহে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাসহ বিল্ডিং কোড নীতিমালা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে কিনা এবং শহরে অবস্থিত রেস্টুরেন্টসমূহে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ও বিল্ডিং কোড নীতিমালা প্রতিপালন হচ্ছে কিনা তা পরিদর্শনপূর্বক যাচাই ও চিহ্নিতকরণসহ এসব বিষয়ে লিখিত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গত ৫ মার্চ একটি ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। যাতে আহ্বায়ক করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. মঈনুল ইসলামকে।

গত কয়েক দিন নারায়ণগঞ্জ শহরের বেশকিছু বহুতল ভবনে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট ও রুফটপ রেস্টুরেন্টে তদারকি অভিযান চালায় সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের সমন্বয়ে টিম।

গত ৫ মার্চ শহরের জাকির সুপার মার্কেটের চাঁদের পাহাড় ও সমবায় ব্যাংক মার্কেটের লাভিস্তা রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছেন সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক টিম। এদিকে ইমারজেন্সি এক্সিট না থাকায় নারায়ণগঞ্জে সাতটি রেস্টুরেন্টকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এদিকে এক বছরের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও আবাসিক বহুতল ভবনকে বাণিজ্যিক ভবনে পরিণত করার ব্যাপারে সমন্বিত কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। যদিও সম্প্রতি রাজউকের চেয়ারম্যান নারায়ণগঞ্জে রাজউকের নিজস্ব কার্যালয় উদ্বোধন করতে এসে নারায়ণগঞ্জেও সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।

আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি হাজী নূর উদ্দিন বলেন, ‘অসংখ্য মানুষ নারায়ণগঞ্জ শহরের ভবনগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে এবং অফিশিয়াল কাজ করছে। এসব ভবনে অগ্নিঝুঁকি মোকাবিলায় সর্বদাই উদাসীনতা দেখতে পাই। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তভাবে তদারকি করলে এই ঝুঁকি অর্ধেকের বেশি কমিয়ে আনা সম্ভব। পাশাপাশি যে কোনো পাবলিক প্লেসে একাধিক এক্সিট জরুরি। অন্যথায় আগুন ও ভূমিকম্পের মতো ঘটনায় দ্রুত বের হতে গিয়ে হুড়াহুড়িতেও অনেকে আহত হতে পারেন। রেস্তোরাঁসহ অফিসগুলোতে আগুন মোকাবিলা করার জন্য প্রশিক্ষণের আওতায় আনা উচিত। আগুনের সূত্রপাত হওয়ার পরপরেই নিভিয়ে ফেলা গেলে বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।‌’

শহরের চাষাঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় তিনটি বহুতল আবাসিক ভবনে স্থাপন করা হয়েছে রেস্তোরাঁ। এর মধ্যে শ্রম অফিসের পাশের বহুতল একটি ভবনের পুরোটাই রেস্তোরাঁ ভবনে রূপ দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি রেস্তোরাঁ যেন কাচের বাক্সে বন্দি। একটি মাত্র সিঁড়ি ও লিফটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এই ভবনে।
সুলতান ডাইন, ডাইনিং লাউঞ্জের মতো অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো চলছে ঝুঁকি মাথায় নিয়েই। আটতলা এই ভবনের পাশেই অবস্থিত দশতলা ভবনের নিচের তিনটি ফ্লোরে স্থাপন করা হয়েছে রেস্তোরাঁ। ওপরে আবাসিক ভবন এবং নিচে বাণিজ্যিক স্থাপনা। 

কাচ্চি ভাই, সিরাজ চুইগোস্ত’র মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বাণিজ্যিক ভবন এড়িয়ে ফ্লোর ভাড়া নিয়েছেন আবাসিক ভবনে। একই ভবনের পঞ্চম তলায় রয়েছে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভাষাসৈনিক সড়কের শেষ প্রান্তে সাততলা একটি ভবনকে রেস্তোরাঁ ভবনের আদল দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে তিনটি ফ্লোর ভাড়া নিয়েছে চিলক্স, পিজ্জাবার্গের মতো খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু এই ভবনটিতেও একটি মাত্র সিঁড়ি এবং লিফট রয়েছে। অগ্নিঝুঁকিতে থাকলেও এসব দেখেও যেন না দেখার ভান করে থাকে দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠানগুলো। কেবল ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বিঘ্নে।

দুর্ঘটনা বিশ্লেষকরা বলছেন, আগুনের মতো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রাজউক, ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন সবার সম্মিলিতভাবে তদারকি প্রয়োজন।

ইত্তেফাক/এসএএস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন