সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যর্থতার কারণ জানালেন সালাউদ্দিন 

আপডেট : ১২ মে ২০২৫, ১৫:২৮

দেশের ক্রিকেটের পঞ্চপাণ্ডবের যুগের ইতি ঘটেছে। তাদের একে একে দল ছাড়ার প্রভাব পড়েছে ক্রিকেটে, ছন্দপতন হয়েছে দেশের ক্রিকেটের। সেই ভাবে পারফর্ম করে সমর্থকদের খুশি করতে পারছেন না ক্রিকেটাররা। তাতে দেশের ক্রিকেট দাঁড়িয়ে এক অনিশ্চয়তার মোড়ে। সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে ধারাবাহিক ব্যর্থতা, বিশেষ করে ব্যাটারদের বাজে পারফরম্যান্স, প্রশ্ন তুলছে দলীয় পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির গুণমান নিয়ে। 

ম্যাচের পর ম্যাচ ভরাডুবি, রানের খরা আর আত্মবিশ্বাসহীন ইনিংস যেন এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করা ক্রিকেটাররাও জাতীয় দলে এসে আটকে থাকে ব্যর্থতার বৃত্তে। লোকাল ক্রিকেটে যাদের ব্যাটে রানের বন্যা হয় তারাও যেন জাতীয় দলে হয়ে ব্যাট চালাতেই ভুলে যান। এবার কেন এমন হয় তার কারণ জানালেন টাইগারদের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। এ সময় এর পেছনে নিজেদের ব্যর্থতাও রয়েছে বলে স্বীকার করে নেন তিনি। 

চলতি মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তান সফরকে লক্ষ্য করে গত সোমবার থেকে মিরপুর শের-ই-বাংলায় অনুশীলন করছেন টাইগাররা। গতকাল চলমান এই অনুশীলন ক্যাম্প শুরুর আগেই গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন কোচ সালাউদ্দিন। সেখানেই ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা বইয়ে দেওয়া ক্রিকেটাররা কেনো জাতীয় দলে এসে ব্যর্থ হন সেই কারণ জানান তিনি। 

সালাউদ্দিন বলেন, 'ঘরোয়া ক্রিকেটের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ম্যাচের পার্থক্য রয়েছে, যেই পার্থক্যটা আমরা ঘাটতিটা আমরা পূরণ করতে পারছি না। এটা আমাদেরই ব্যর্থতা। কারণ একজন খেলোয়াড় যখন ঢাকা লিগ খেলে ম্যাচে দেখবেন দ্বিতীয় ওভারেই একজন বাঁহাতি স্পিনার চলে আসে কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে গেলে কিন্তু ১৪০ বেগে ইয়র্কার বল যারা করে তাদের মুখোমুখি হতে হয়। সেক্ষেত্রে কিন্তু খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা বলা যাবে না, আমরাই হয়তো তাদের সেই সুযোগটা দিতে পারিনি কীভাবে তাদের তৈরি হতে হবে। যে ছেলেটা ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করছে তার মধ্যে অবশ্যই কিছু আছে। সেখান থেকে তাকে যখন জাতীয় দলে আনা হয় অবশ্যই তাকে আন্তর্জাতিকের সেই স্বাদটা দিয়েই আনতে হবে।' 

তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার আলো দেখছে কোচ। তিনি বলেন, 'আমার মনে হয় 'এ' দল নিয়ে এখন ভালো পরিকল্পনা হচ্ছে। নিউজিল্যান্ডের ভালো একটা দল এসেছে, সামনে তারা অস্ট্রেলিয়াতেও খেলবে। তারা যখন এইসব লেভেলে পারফর্ম করবে তখন কিন্তু আন্তর্জাতিক ম্যাচেরও স্বাদ পেয়ে যাবে। তাতে জাতীয় দলে পারফর্ম করা তাদের জন্য সুবিধে হবে।' 

অলরাউন্ডারের জন্য আরও কয়েক দিন ভুগবেন টাইগাররা 

লম্বা সময় ধরে তিন ফরম্যাটে অলরাউন্ডার ভূমিকায় টাইগারদের সার্ভিস দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। দল ব্যালেন্স রাখতে তার ভূমিকা ছিল দুর্দান্ত। ব্যাটে-বলে দুই ডিপার্টমেন্টেই তিনি নিয়মিত অবদান রাখতেন। তবে বর্তমানে তিনি দলে নেই। তাই অলরাউন্ডার শূন্যতায় ভুগছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যা হারে হারে টের পাচ্ছেন কোচরা। তাই সাকিবের শূন্যস্থান পূরণ করতে মরিয়া হয়ে নতুন অলরাউন্ডার খুঁজে বেড়াচ্ছেন তারা। 

সালাউদ্দিন বলেন, 'এটা নিয়ে (পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার শূন্যতা) আরও কিছুদিন ভুগবো, আমরাও জানি। বিশেষ করে সাদা বলের ক্রিকেটে আমাদের এই জায়গাটায় অভাব রয়েছে। আমাদের দেশের ক্রিকেট এগোবে চারটা ডিপার্টমেন্টের (ডেভেলপমেন্ট, এইচপি, টাইগার এবং জাতীয় দল) ওপরেই। যেহেতু আমাদের অলরাউন্ডারের অভাব রয়েছে তো আমাদের এটা তৈরি হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। যারাই ছোটখাটো অলরাউন্ডার আছে তাদের ওপরের দিকে তুলে আনতে হবে। যদি তাদের দিয়ে জায়গাটা পূর্ণ করতে না পারি সেক্ষেত্রে দলে ব্যালেন্স করতে সবসময় কষ্ট হবে।' 

ভবিষ্যৎ অলরাউন্ডার হিসেবে তানজিম সাকিব, রিশাদ হোসেন ও শেখ মাহাদীকে বিবেচনায় রাখছেন কোচ। তবে তাদের বাহিরেও নতুন অলরাউন্ডার খোঁজে তারা। সালাউদ্দিন বলেন, 'যারাই কম বেশি ব্যাটিং পারে যেমন সাকিব (তানজিম হাসান), মাহাদী, রিশাদ... আমাদের লক্ষ্য রয়েছে তারা যেন সুযোগ পায় ভালোভাবে ব্যাটিং করতে পারে, উন্নতি করতে পারে তাহলে এটা দলের জন্য অনেক বেশি উপকারী হবে। তো যেটা বললাম আমাদের লক্ষ্য তারা যেন ভালো ব্যাটিং করে, তারা যেন সুযোগ পায় তাহলে দল ভবিষ্যতে আরও ব্যালেন্সড হবে। তবে এর মাঝে যদি আরও ভালো কোনো অলরাউন্ডার আমরা পেয়ে যাই তাহলে তো আরও বেশি উপকার হবে দলের জন্য। সত্য বলতে অলরাউন্ডার না থাকলে সাদা বলে দল সাজানো বেশ কষ্টকর। কারণ যারা ওপরে ব্যাটিং করে তাদের জন্য অনেক চাপ হয়ে যায়। তাদের চিন্তা করতে হয় যে তাদের পরের দিকের ব্যাটাররা ব্যাটিং পারে না তারা কিন্তু টিকে থাকার চেষ্টা করে ডট বল খেলে।'

ইত্তেফাক/জেডএইচ