তসলিম উদ্দিন পেশায় একজন দিনমজুর এবং তার স্ত্রী মহসিনা বেগম গৃহিণী। এই দম্পতির ছোট ছেলে জসিম উদ্দীন এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। জসিমের এ সাফল্য তার দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের অফুরন্ত আনন্দ এনে দিয়েছে ঠিকই। সঙ্গে এনেছে অনেক দুশ্চিন্তা।
কারণ ভর্তি পরীক্ষায় সফল হলেও অর্থের অভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তে বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চোচপাড়া বুরাবার গ্রামেই দিনমজুরের কাজ করেন তসলিম। পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা না থাকায় বাবার সঙ্গে দিনমজুরির কাজ করে করেছেন জসিম উদ্দীন। পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন সমানতালে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট জসিম পরিবারে শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাচ্ছেন নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। বড়পলাশবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও সমিরউদ্দীন স্মৃতি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন তিনি।
এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন জসিম। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ‘ডি’ ইউনিটে ৪৬৭তম মেধাক্রমে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তার পক্ষে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
জসিম উদ্দিন বলেন, আমার স্বপ্ন প্রশাসনের ক্যাডার হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও এখন পরিবারের টানাপোড়েনে সেই স্বপ্ন থমকে গেছে। আগামী ২০ মে ভর্তির শেষ তারিখ। এখনও ভর্তির টাকা জোগাড় হয়নি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সুবিধা না থাকায় ভর্তি হওয়ার পরে ম্যাচে থেকে পড়াশোনা করতে হবে।
এদিকে জসিমের প্রতিবেশীরা জানান, ছোট বেলা থেকেই জসিম অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। কিন্তু আর্থিক সংকটে তার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। তারা আশা করেন, সরকারি বা বেসরকারি সহযোগিতা পেলে জসিম তার স্বপ্ন পূরণে এগিয়ে যেতে পারবে।
জসিমের বাবা তসলিম উদ্দীন জানান, স্কুল-কলেজের পড়াশোনা করার সময় একসঙ্গে এত টাকা লাগেনি। অল্প করে খরচ ছিল, দিনমজুরি করে চালিয়েছি। এখন একসঙ্গে ভর্তির টাকা, ম্যাচে থাকতে হবে। ভাড়া, খাওয়া খরচ সবমিলিয়ে এত টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভিটেবাড়ি ছাড়া কোনো সম্পদ নেই যে বিক্রি করে ছেলের পেছনে খরচ করবো।
ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ভর্তির জন্য সহযোগিতা চান জসিমের বাবা ও মা। তাদের অনুরোধ এই দুঃসময়ে ছেলের স্বপ্ন পূরণে মানবিক মানুষগুলো যেন এগিয়ে আসেন সহযোগিতা করতে।
সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো তাকে সহযোগিতা করা হবে।