ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হাফিজুল ইসলামের উপস্থিতি সন্দেহে ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবনে তালা দিয়েছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। এসময় সিন্ডিকেট সদস্য, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও কোষাধ্যক্ষেও অবরুদ্ধ করেন তারা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ হাফিজের পক্ষ হয়ে কাজ করছে কমিটি।
শুক্রবার (১৬ মে) বিকাল ৩ টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবনের দুই গেট অবরোধ করে অবস্থান নেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বিষয়টির স্থায়ী সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনস্থল ত্যাগ করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
সকাল ১০টায় রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের গগন হরকরা মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও ডিআইজি ড. আশরাফুর রহমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সভা শেষে দুপুর ২টায় অনুষদ ভবনে তিনি শিক্ষক হাফিজুলের উপস্থিতিতে ২০ জন শিক্ষার্থীকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন, যাতে শিক্ষার্থীরা সম্মত হন।
তবে প্রায় ২ ঘণ্টা পর ইবনে সিনা ভবনে এসে তিনি কেবল ৩-৪ জন শিক্ষার্থীর অভিযোগ গ্রহণের কথা জানান, যা শিক্ষার্থীরা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর তারা বিষয়টির স্থায়ী ও সুস্পষ্ট সুরাহার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, অভিযুক্ত শিক্ষক হাফিজুল ওই ভবনের একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন এবং তিনি অবরুদ্ধ ছিলেন।
এই সময় শিক্ষার্থীরা ডিআইজি, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও কোষাধ্যক্ষসহ অন্যান্যদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরে শিক্ষার্থীরা অন্য গেটে গেলে ডিআইজি আশরাফুর রহমান স্থান ত্যাগ করেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের সঙ্গে প্রশাসন একের পর এক সিদ্ধান্তের নামে টালবাহানা করতেছে। আমরা প্রশাসনের এসব টালবাহানা মানবো না। হাফিজের বিষয়ে আজকের মধ্যেই প্রশাসনকে স্পষ্ট সমাধান দিতে হবে। না হলে আমরা আন্দোলন ছেড়ে উঠবো না।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হাফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে শ্রেণীকক্ষে ছাত্রীদের অনুপযোগী বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ, কথা না শুনলে মার্ক কম দেওয়া, মেয়েদের পার্সোনাল নাম্বারে কল দিয়ে বিরক্ত করা, ফেইক আইডি দিয়ে বিভিন্ন ছাত্রীর সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ কথোপকথন ও ছাত্রদের জোরপূর্বক সমকামিতায় বাধ্য করা সহ নানা অভিযোগ ওঠে। পরে তার অপসারণের দাবিতে প্রধান ফটক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছিলেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া উপাচার্যের কাছে তারা লিখিতভাবে ২৭ দফা অভিযোগ ও মৌখিকভাবে ঘটনার বর্ণনা দিলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সত্যতা পায়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ২৬৬তম সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার বার্ষিক একটি ইনক্রিমেন্ট বাতিলসহ এক বছরের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়। তবে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা হাফিজের এই শাস্তিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে হাফিজকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানায়। দাবি আদায়ে গত ২৮ জানুয়ারি শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করলে প্রশাসন শাস্তি পর্যালোচনার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে। এরই প্রেক্ষিতে সর্বশেষ সিন্ডিকেটে শাস্তি পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।