আগামী জাতীয় নির্বাচন সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে হওয়ার মত পরিস্থিতি এখনো দেখতে পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন আছে তাদের; কারণ তাদের বিচারে, নির্বাচন কমিশন অনেক ক্ষেত্রে ‘সঠিক পদক্ষেপ’ নিতে পারছে না।
রোববার (১৮ মে) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর সংলাপে এ কথা বলেন তাহের। তার নেতৃত্বে জামায়াতের ১১ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল এদিন সংলাপে অংশ নেয়। সংলাপে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের আগে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরিতে আরো বেশি ‘মনোযোগ’ দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন এই জামায়াত নেতা।
তাহের বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আগামী নির্বাচনও একেবারে সঠিক সুষ্ঠু হবে–এমন পরিস্থিতি এখনো লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। কারণ কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় ইতোমধ্যে নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে। কিছুদিন আগে পাবনায় আটঘরিয়া এলাকায় জামায়াতের অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। কিছু মারধরের ঘটনা ঘটেছে। এখনো নির্বাচনের তারিখই হয়নি, জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা হচ্ছে। সে জন্য নির্বাচন সংস্কার কমিটির যিনি চেয়ারম্যান আছেন, আমি তাকে ওয়েলকাম করছি।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির বলেন, আমি মনে করি, এমন একটি ব্যবস্থা আমাদের করা উচিত, যে ব্যবস্থায় নির্বাচন সুষ্ঠু, সঠিক হবে, তার জন্য যা করা দরকার তাই করতে হবে। এর জন্য যদি কঠোর হতে হয়, তাই হতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হলে তাই করতে হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তাহের বলেন, নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাও আমাদের কাছে কিছুটা প্রশ্নবোধক মনে হচ্ছে। কারণ কিছু ঘটনায় আমরা দেখছি যে নির্বাচন কমিশন তার সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছে না। সে ক্ষেত্রেও সরকারকে অনুরোধ করব, তারা যেন খেয়াল রাখে। এবং নির্বাচনের বেশ আগেই, যেন দেশের পরিস্থিতিটা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড যেটাকে আমরা বলি, সেটা তো ভোটের দিনের ইস্যু না, ভোটের অনেক আগের ইস্যু। সে কাজগুলো যেন সরকার শুরু করে, যেখানে যেখানে সন্ত্রাসের সম্ভাবনা আছে, এক দল আরেক দলের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ার যে লক্ষণ আমরা দেখছি, এগুলো অনেক আগেই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির বলেন, সরকারের রাজনৈতিক দলগুলো ও জাতিকে এই বার্তা দিতে হবে যে, ‘নির্বাচনকে আমরা যে কোনোভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু করব’। এ ক্ষেত্রে সরকারের একেবারে নিরপেক্ষ হওয়া দরকার।
নির্বাচন নিয়ে সরকারের পদক্ষেপে কিছুটা ‘ঘাটতি আছে’ মন্তব্য করে তাহের বলেন, জেনে, অথবা না জেনে, কিছু কিছু পদক্ষেপ এমন আছে, যেখানে নিরপেক্ষতার অথবা দক্ষতার অভাব আছে। নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু হয় ও সন্ত্রাসমুক্ত হয়, সেটাই আমাদের একটি প্রধান লক্ষ্য। আজকে বাংলাদেশ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, সেখানে বড় অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল গত তিনটি নির্বাচনের নামে প্রহসন। এবং বাংলাদেশকে যদি এই ব্যাকলগ থেকে বেরিয়ে আসতে হয়, তাহলে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার।
তাহের বলেন, আমরা দেখছি, নির্বাচনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট টাইমলাইন না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরেও নানা ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। গত আলোচনার পরে আনেকগুলো বিষয়ে ঘটেছে, কারো কারো বিশ্লেষণ হচ্ছে, এর পেছনেও দেশকে আনস্টেবল করার জন্য ষড়যন্ত্র আছে, এবং সেই ষড়যন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে, এ সমস্ত নানামুখী অনরেস্ট (অস্থিরতা) তৈরি করার প্রক্রিয়া। আমরা এ ধরনের ষড়যন্ত্রের নিন্দা করছি। সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা যেন আরো কিছু দৃঢ়তার সাথে, সঠিকতার সাথে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করে।
তিনি বলেন, জাতির স্বার্থে সকলের কল্যাণ কীভাবে হতে পারে সেটি হচ্ছে আমাদের বিবেচনার বিষয়। সে কারণে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে যেটা উত্তম, যেটা বেরিয়ে আসছে, আমরা সেখানে আমাদের মত পরিবর্তন করে ঐক্যমত্য পোষণ করেছি। দেশের জন্য, জাতির জন্য।
জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের সহ সভাপতি আলী রিয়াজের সভাপতিত্বে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান সংলাপে অংশ নেন।