সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

'পাকিস্তানি গুপ্তচর' সন্দেহে ৯ জনকে আটক করেছে ভারত

আপডেট : ১৯ মে ২০২৫, ১৮:৪৩

ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থা পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশে অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ৯ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এই গ্রেপ্তারগুলো এমন এক সময়ে ঘটলো যখন পাহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং গোয়েন্দা তথ্য ফাঁস হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে প্রশাসন উদ্বিগ্ন।

গ্রেপ্তার হওয়া এই ব্যক্তিদের পরিচয় সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। কেউ ট্র্যাভেল ভ্লগার, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী, আবার কেউ নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একই  অভিযোগ যে তারা পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর হয়ে ভারতের সামরিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত গোপন তথ্য পাচার করছে।

ইউটিউব চ্যানেল ‘Travel With Jeo’ পরিচালনাকারী জ্যোতি মালহোত্রা (৩৩)-কে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। ছবি: সংগৃহিত

ইউটিউবার জ্যোতি মালহোত্রা

হরিয়ানার হিসারের বাসিন্দা এবং ইউটিউব চ্যানেল ‘Travel With Jeo’ পরিচালনাকারী জ্যোতি মালহোত্রা (৩৩)-কে গত সপ্তাহে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি পাকিস্তান হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং অন্তত দুইবার পাকিস্তান সফর করেন। তাকে ভারতীয় সামরিক তথ্য পাকিস্তানে পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হিসারের পুলিশ সুপার শশাঙ্ক কুমার সাওয়ান বলেন, ‘তরুণরা সহজ অর্থের লোভে ভুল পথে পা দিচ্ছেন। তারা এখন শত্রু দেশের লক্ষ্যে পরিণত হচ্ছে।’

পাঞ্জাবের খালসা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র দেবেন্দ্র সিং ধিলনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ। ছবি: সংগৃহিত

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র দেবেন্দ্র সিং ধিলন

২৫ বছর বয়সী দেবেন্দ্র সিং ধিলন, পাঞ্জাবের খালসা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র। তাকে হরিয়ানার কৈথাল থেকে ১২ মে গ্রেপ্তার করা হয়, কারণ তিনি ফেসবুকে বন্দুক ও অস্ত্রের ছবি আপলোড করেছিলেন। ভারতীয় বাহিনী তদন্তে দাবি করেছে, তিনি গত নভেম্বরে পাকিস্তান গিয়েছিলেন এবং পাতিয়ালা সেনানিবাসের ছবিসহ গুরুত্বপূর্ণ সামরিক তথ্য আইএসআইকে সরবরাহ করেছিলেন।

হরিয়ানায় নিরাপত্তারক্ষী নওমান ইলাহিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহিত

নিরাপত্তারক্ষী নওমান ইলাহি

২৪ বছর বয়সী নওমান ইলাহি, হরিয়ানায় একজন নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করতেন। পানিপথ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পাকিস্তানি হ্যান্ডলারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন এবং তথ্য সরবরাহ করতেন। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর শ্যালকের অ্যাকাউন্টে পাকিস্তান থেকে অর্থ পাঠানো হতো।

হরিয়ানা থেকে ধরা পড়েন আরমান ও তারিফ

২৩ বছর বয়সী আরমান, হরিয়ানার নুহ জেলা থেকে ১৬ মে গ্রেপ্তার হন। পুলিশ দাবি করেছে, তিনি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সময় গোপন সামরিক তথ্য পাকিস্তানে পাঠিয়েছেন। এরপর, আরেক অভিযানে নুহ জেলার কাঙ্গারকা গ্রাম থেকে তারিফ নামে আরেক সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারের সময়, তিনি মোবাইল থেকে পাকিস্তানি নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ডিলিট করার চেষ্টা করেন বলে ভারতীয় পুলিশের অভিযোগ।

ব্যবসায়ী শাহজাদ ও পাচার চক্রের অভিযোগ

শাহজাদ, উত্তর প্রদেশের রামপুরের বাসিন্দা এবং একজন ব্যবসায়ী। মোরাদাবাদে তাকে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF) গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি জাতীয় নিরাপত্তা সম্পর্কিত তথ্য পাকিস্তানে পাচার করতেন এবং মশলা, পোশাক ও প্রসাধন সামগ্রী পাচারের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।

মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে গুপ্তচর: মুর্তজা আলী

মোহাম্মদ মুর্তজা আলী-কে গুজরাট পুলিশের জলন্ধর অভিযান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তিনি নিজে তৈরি করা একটি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে পাকিস্তানের আইএসআইয়ের কাছে তথ্য পাচার করতেন। তার কাছ থেকে ৪টি মোবাইল ফোন ও ৩টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে।

গাজালা (বাঁয়ে) এবং ইয়ামিন। ছবি: সংগৃহিত

পাঞ্জাব থেকে গাজালা ও ইয়ামিন মোহাম্মদের গ্রেপ্তার

এই চক্রে জড়িত সন্দেহে পাঞ্জাব থেকে আরও দুজন – গাজালা ও ইয়ামিন মোহাম্মদ – কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও আইএসআইয়ের হয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।

এই গ্রেপ্তারগুলো এমন এক সময় ঘটছে, যখন পাহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তান-সমর্থিত গোষ্ঠীর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছে ভারত। এর জবাবে ভারত শুরু করেছিলো ‘অপারেশন সিন্দুর’, যার আওতায় পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন পয়েন্টে হামলা চালানো হয়। পাকিস্তান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। পরে ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়, যার মাধ্যমে চার দিনের যুদ্ধ শেষ হয়।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

ইত্তেফাক/টিএস