গাজা উপত্যকায় অবরুদ্ধ মানুষের জন্য আজ মঙ্গলবার (২০ মে) বড় ধরনের মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পথ খুলেছে। ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ আজ প্রায় ১০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয় অফিস এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে সোমবার (১৯ মে) আড়াই মাসেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো গাজায় ঢুকেছে পাঁচটি ত্রাণবাহী ট্রাক। এই দীর্ঘ বিরতির পর মঙ্গলবার একসঙ্গে ১০০ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেওয়া একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে ইসরায়েলি দাবি অনুযায়ী, তারা ৯টি ট্রাক ঢুকতে দিয়েছে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু জাতিসংঘের মুখপাত্র জেনস লার্কে নিশ্চিত করেন, প্রকৃতপক্ষে মাত্র পাঁচটি ট্রাকই প্রবেশ করেছিল।
আজকের ত্রাণ পাঠানোর বিষয়টি সম্পর্কে জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মুখপাত্র জেনস লার্কে বলেন, ‘আমরা গাজায় আরও বেশি ত্রাণ ট্রাক ঢোকার অনুমতি চেয়েছিলাম এবং তা পেয়েছি। এই সংখ্যা গতকালের তুলনায় অনেক বেশি। প্রায় ১০০টি ট্রাক আজ গাজায় ঢুকবে।’
এই ট্রাকগুলো করিম আবু সালেম ক্রসিং দিয়ে প্রবেশ করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এই ক্রসিংটি বর্তমানে গাজার জন্য অন্যতম কার্যকর প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যদিও সেখানে ইসরায়েলের কড়া নজরদারি রয়েছে।
জেনস লার্কে আরও বলেন, ‘আজকের এই ত্রাণগুলো আগের কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে। আমরা এসব ত্রাণ সংগ্রহ করব এবং তারপরে সঠিকভাবে বিতরণের কাজ শুরু করব।’
তিনি জানান, ট্রাকগুলোতে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার এবং পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী রয়েছে, যা এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। এদিকে গাজায় এতদিন জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক রেডক্রসসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ত্রাণ বিতরণের কাজ পরিচালনা করত। তবে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এখন নতুন একটি বিতরণ সংস্থা গঠনের কথা বলছে, যা মানবিক ত্রাণ বিতরণে মধ্যস্থতা করবে। কিন্তু এই নতুন ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান।
বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল এভাবে ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে গাজায় নিজেদের প্রভাব বিস্তারের কৌশল নিয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপরেই এখনো সাধারণ মানুষের আস্থা বেশি।
সাম্প্রতিক সময়ে গাজার মানবিক পরিস্থিতি চরমে পৌঁছেছে। খাদ্য, ওষুধ এবং নিরাপদ পানির তীব্র সংকটে ভুগছে লাখো মানুষ। ইসরায়েলি অবরোধ এবং টানা সংঘাতে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের কাছে আজকের ১০০ ট্রাক ত্রাণ কিছুটা হলেও স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। তবে বাস্তবতা বলছে, এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য অবরোধ পুরোপুরি প্রত্যাহার করা ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা এখন জরুরি।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল