ইসরায়েলের বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ইয়ার গোলান এক বিস্ফোরক মন্তব্য করে দেশটির রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেছেন, গাজার যুদ্ধ ইসরায়েলকে একটি নৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটে ফেলেছে, যেখানে সেনারা ‘শখের বশে শিশুদের হত্যা করছে’ এবং দেশটি দ্রুত ‘একটি অযোগ্য ও একঘরে রাষ্ট্রে’ পরিণত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২০ মে) ইসরায়েলি পাবলিক ব্রডকাস্টার কেএএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেন বামপন্থী ডেমোক্র্যাটস পার্টির প্রধান ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ইয়ার গোলান। তিনি বলেন,‘একটি সুস্থ রাষ্ট্র কখনোই সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে না, শখের বশে শিশুদের হত্যা করে না এবং জনগণকে জোর করে বিতাড়নের লক্ষ্য গ্রহণ করে না।’
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল যদি তার নৈতিক ও মানবিক পথচলায় ফিরে না আসে, তাহলে এটি দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসনের মতোই আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
ইয়ার গোলান নেতানিয়াহুর সরকারের কড়া সমালোচনা করে বলেন,‘বর্তমান সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ, নীতিহীন এবং সম্পূর্ণভাবে অযোগ্য। সংকটের সময় তারা দেশ চালাতে জানে না। এর ফলে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।’ এই মন্তব্য প্রকাশিত হওয়ার পরপরই ইসরায়েলের রাজনৈতিক মহলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গোলানের বক্তব্যকে ‘অপবাদ’ এবং ‘ঘৃণ্য উসকানি’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা জানান।
পাল্টা এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন,‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে নৈতিক বাহিনী। গোলানের এই বক্তব্য আমাদের সেনা ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এক জঘন্য অপবাদ।’
চরম ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেনগাভির গোলানকে ‘ইহুদিবিরোধী অপপ্রচারক’ বলে অভিহিত করেন এবং অভিযোগ করেন, তিনি ‘হামাসের মতো কথা বলছেন।’
যোগাযোগমন্ত্রী শ্লোমো কারহি আরও একধাপ এগিয়ে গোলানকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যায়িত করেন। এমনকি বিরোধী জোটের অন্যতম নেতা ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজও গোলানের মন্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
গোলানের বক্তব্য এমন সময় সামনে এসেছে যখন ইসরায়েলের ভেতরে আরও উগ্র ও সহিংস বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ছে। ইসরায়েলের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা হারেটজ জানিয়েছে, দখলকৃত পশ্চিম তীরের এক অবৈধ বসতিতে বসবাসকারী চরমপন্থি বসতি স্থাপনকারী রিভকা লাফেয়ার সরাসরি গাজার লাখ লাখ মানুষের ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ ও ‘উৎখাতের’ আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বাইবেলের কাহিনীতে উল্লিখিত ‘আমালেক’ জাতির সম্পূর্ণ ধ্বংসের উদাহরণ টেনে বলেন,‘ গাজার শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত কাউকে ছাড়া হবে না। আমরা প্রতিশোধ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের বক্তব্য শুধু যুদ্ধকে আরও নিষ্ঠুর করছে না, বরং গাজার সাধারণ মানুষের জন্য অস্তিত্বগত হুমকি তৈরি করছে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৩,৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যুদ্ধবিরতির আহ্বান উপেক্ষা করে ইসরায়েল এখনো অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এই প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োয়াভ গালান্টের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। একইসঙ্গে, গাজায় ‘গণহত্যা’র অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলাও চলমান। তথ্যসূত্র: আনাদোলু এজেন্সি