সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

সুনামগঞ্জে বাঁশ-গাছ দিয়ে নদী ভাঙনের হাত থেকে বসতভিটা রক্ষার চেষ্টা

আপডেট : ২১ মে ২০২৫, ১৩:৩৭

কালনী নদীর ভাঙনে দিশেহারা সুনামগঞ্জের শাল্লার কয়েকটি গ্রামের হাজারো পরিবার। প্রায় এক দশক ধরে ভাঙছে ওই নদীর দুই তীর। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে সরকারি স্কুল, রাস্তাঘাট, বাজার, ফসলি জমি। সম্প্রতি নদীর পানির উচ্চতা বাড়ায় নতুন করে ভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাঁশ-গাছ দিয়ে নদী ভাঙনের হাত থেকে বসতভিটা রক্ষার চেষ্টা করছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয়রা জানান, প্রায় একযুগ ধরে মার্কুলি থেকে গ্রাম শাল্লা পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার নদীর পাড় ভাঙ্গছে। ইতোমধ্যে এলাকার অনেক মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে হারিয়ে গেছে। অনেকেই মাথা গোজার ঠাঁই না পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় কষ্টে জীবন যাপন করছে। সরকারি স্কুল, রাস্তাঘাট, ফয়জুল্লাপুর আদর্শ বাজার, প্রতাপুর বাজার আগেই বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। আরও ভেড়াডহর ও মেদা বাজারসহ আরও কয়েকটি গ্রাম যেকোনো মুহুর্তে বিলীনের শঙ্কা করা হচ্ছে। 

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, কালনী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে উপজেলার কিছু অংশে নতুন করে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। শাল্লার বিভিন্ন গ্রামের অন্তত কয়েক কিলোমিটার এলাকায় এ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এসব গ্রামে নদী ভাঙন থেকে বাড়িঘর রক্ষার জন্য অনেকেই নদীর তীরে গাছ-বাঁশ দিয়ে (আটকা) বাঁধ দিয়েছে। আবার কেউ কেউ পূর্ব প্রস্তুতি নিয়েছে নিরাপদ স্থানে বসতি স্থাপনের। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডে (পাউবি) সূত্রে জানা গেছে, কালনী-কুশিয়ারা নদীর পাড় সংলগ্ন টুকচাঁনপুর, ফয়জুল্লাপুর, প্রতাপপুর, ভেড়াডহর, মেদাবাজার ও গ্রাম শাল্লা মোট ৬টি পয়েন্টে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ডিজাইন ও প্রাক্কলন (সম্ভাব্য) ব্যয়সহ বরাদ্দ অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছিল। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ না আসায় কাজগুলো বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ ২০২৫ সালের মে মাসে ফয়জুল্লাপুর ১ কোটি ৩২ লাখ ও প্রতাপপুর ১ কোটি ৭৪ লাখ বরাদ্দের জন্য দরপত্র দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের কারণে দরপত্র বাতিল হয়ে যায়। তবে ইমার্জেন্সি কাজের জন্য আবারও প্রস্তাবনা পাঠানো হবে, যদি অনুমোদন হয় তাহলে অক্টোবর দিকে কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। 

বাহাড়া ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ড সদস্য গনেন্দ্র দাস বলেন, কালনী নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি জমি হারিয়ে অনেক মানুষ দিশেহারা। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেও সুফল পাইনি। এই এলাকার নদী ভাঙনের কবল থেকে আমাদের অসহায় মানুষকে বাঁচানোর জন্য সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

ফয়জুল্লাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য উসমান গণি জানান, ফয়জুল্লাপুর শতাধিক বসতি, আদর্শ বাজার ও বহু ফসলি জমি ইতোমধ্যে ভেঙে গেছে। বর্তমানে আরও কয়েকটা পাড়া ও বাজার নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড শাল্লা শাখার উপ-সহকারি প্রকৌশলী রিপন মাহমুদ বলেন, আমরা টেন্ডার লাইভ করেছিলাম কিন্তু গত মে মাসে বাতিল হয়ে গেছে। কুশিয়ারা নদীর ভাঙনে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে জায়গাটা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আরও ঘরবাড়ি ও বাজার বিলুপ্ত হওয়ার পথে। স্থায়ীভাবে না হলেও আপদকালীন নদী ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রস্তাবনা দেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। 

সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। ডিজাইন-ইস্টিমিটসহ টেন্ডার করে বরাদ্দ চেয়েছিলাম। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এপ্রোভ (অনুমোদন) করে নাই। যেহেতু আবারও ভাঙনের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।

ইত্তেফাক/এপি