বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

যেভাবে নেবেন স্টারলিংক সংযোগ, ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যাবে কি

আপডেট : ২১ মে ২০২৫, ১৭:২৫

বাংলাদেশের বাজারে মঙ্গলবার (২০ মে) বাণিজ্যিক সেবা শুরু করেছে স্টারলিংক। স্টারলিংকের ইন্টারনেট–সেবা পেতে হলে গ্রাহককে সরাসরি যেতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে।

স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে গেলে ‘রেসিডেনশিয়াল’ ও ‘রোম’ নামের দুটি অপশন দেখাবে। রেসিডেনশিয়ালে ‘অর্ডার নাউ’ অপশনে গিয়ে নিজের স্থান নির্বাচন করতে হবে। তবে সরকার ‘রোম’, অর্থাৎ ভ্রাম্যমাণ সেবার অনুমোদন এখনো দেয়নি।

এরপর চেকআউট অপশনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও টাকা পরিশোধ করতে হবে। পরে ‘প্লেস অর্ডার’–এ ক্লিক করতে হবে। তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে পুরো সেট গ্রাহকের কাছে পৌঁছে যাবে। স্টারলিংক বলছে, গ্রাহক খুব সহজে নিজেই এটি সেট করতে পারবেন।

একটি ‘ডিভাইস’-এ কয়জন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একটা ‘ডিভাইস’ (যন্ত্র) থেকে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ মিটার পর্যন্ত ইন্টারনেট পাওয়া যাবে। গ্রামে এটা ৫০ থেকে ৬০ মিটার পর্যন্ত হবে। এক ব্যক্তি কিনে বা একাধিক ব্যক্তি সমিতি আকারে কিনে সেটা ভাগাভাগি করে ব্যবহার করতে পারবেন।

খরচ  হবে কত টাকা

স্টারলিংকের সেবা পেতে মাসে ব্যয় করতে হবে চার থেকে ছয় হাজার টাকা। সঙ্গে ৪৭ হাজার টাকার সরঞ্জাম কিনতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি–বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আঞ্চলিক পর্যায়ে বাংলাদেশে স্টারলিংকের দাম কম এবং যে দাম ধরা হয়েছে, সেটা যৌক্তিক। তবে প্রতিবেশী অন্যান্য দেশেও যখন চালু হবে এবং সেখানকার দাম বিবেচনায় সরকারের তা পর্যালোচনার সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, স্টারলিংকের সেবার মূল্যহার বিটিআরসি অনুমোদন দিয়েছে। স্টারলিংকের ‘সেটআপ’ সরঞ্জামের জন্য এককালীন খরচ হবে ৪৭ হাজার টাকা। সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে রিসিভার বা অ্যানটেনা, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা বা পাওয়ার সাপ্লাই। দুটি প্যাকেজ এখন পর্যন্ত চালু করেছে তারা। স্টারলিংক রেসিডেন্সের মাসিক খরচ ৬ হাজার টাকা এবং রেসিডেন্স লাইটের খরচ ৪ হাজার ২০০ টাকা।

উচ্চগতি

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ছাড়াও ভুটান ও শ্রীলঙ্কায় স্টারলিংক আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করেছে। বাংলাদেশে বিদেশি ‘গেটওয়ে’ (ব্যান্ড সরবরাহের উৎস) ব্যবহার করে দেশে ৯০ দিনের জন্য পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করেছে তারা। স্টারলিংকের গ্রাউন্ড স্টেশনসহ অন্যান্য বিষয় প্রস্তুত হলে স্থানীয় গেটওয়ে দিয়ে সেবা দিতে হবে। স্টারলিংকে সর্বোচ্চ ৩০০ এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড) গতিতে আনলিমিটেড (সীমাহীন) ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে।

যে সুবিধা পাওয়া যাবে

উচ্চগতির জন্য স্টারলিংক জনপ্রিয়। বলা হয়, প্রত্যন্ত বা দুর্গম অঞ্চল যেখানে প্রথাগত ইন্টারনেট–সেবা পৌঁছাতে পারে না, সেখানে স্টারলিংক সহজেই সেবা দিতে পারে।

স্টারলিংক আনার কারণ হিসেবে সরকার বলছে, দেশে মাত্র ৩০ শতাংশ মোবাইল টাওয়ার ফাইবার দিয়ে সংযুক্ত। বাকিগুলোয় মাইক্রোওয়েভ দিয়ে মোবাইল অপারেটররা সেবা দেয়, যার সক্ষমতা কম। স্টারলিংকের ক্ষেত্রে মাত্র একটা সেটআপ বক্স দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে। অর্থাৎ গ্রামের কেউ স্টারলিংক নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে উচ্চগতির ইন্টারনেট পাবেন। অর্থাৎ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় যে ধরনের ইন্টারনেট গতি থাকবে, স্টারলিংকের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও একই গতি পাওয়া যাবে।

নিরাপত্তা

বিভিন্ন দেশেই স্টারলিংক নিয়ে নিরাপত্তাশঙ্কার বিষয়টি আছে। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে স্টারলিংকের কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে। ৩ মে শ্রীলঙ্কার নিউজওয়্যারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটির প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে বলেছেন, সরকার স্টারলিংক ব্যবহারকারীদের ডেটায় প্রবেশ করতে পারে না। কারণ, এটি বিদেশিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কাজ করে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ফয়েজ আহমদ বলেছেন, স্টারলিংককে স্থানীয় গেটওয়ে দিয়ে সেবা দিতে হবে। বর্তমানে বিদেশি গেটওয়ে দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে ৯০ দিনের জন্য বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে। এরপর তাদের দেশের স্থানীয় গেটওয়ে ব্যবহার করতে হবে। এতে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি দেশে আসা ডিভাইসের ক্ষেত্রে সরকারের ছাড়পত্র লাগবে। তিনি আরও বলেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য আইনানুগ আড়ি পাতার বিধান স্টারলিংককে মানতে হবে। ইতিমধ্যে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সঙ্গে স্টারলিংকের যোগাযোগ হয়েছে।

স্টারলিংক বাংলাদেশের বাজার ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছিল ২০২১ সাল থেকে। সে বছর ও ২০২২ সালেও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে। তবে সে সময় সরকার থেকে কোনো সাড়া পায়নি। এরপর ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে স্টারলিংকের প্রতিনিধিরা আসেন এবং তৎকালীন মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তখন স্টারলিংকের প্রযুক্তি এনে পরীক্ষাও করা হয়।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের বাজারে স্টারলিংকের প্রবেশের ক্ষেত্র আরও ত্বরান্বিত হয়। বিডা গত ২৯ মার্চ স্টারলিংককে বিনিয়োগের নিবন্ধন দেয়। এর এক মাস পর ২৯ এপ্রিল বিটিআরসি ১০ বছরের জন্য তাদের লাইসেন্স দেয়।

স্টারলিংকের মালিক প্রতিষ্ঠান হলো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক, যিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এবং যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ভিডিও কলে ইলন মাস্কের সঙ্গে আলোচনা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস পরে ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে স্টারলিংকের সেবা বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চালুর ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেন। এরপর দ্রুত স্টারলিংককে বিভিন্ন অনুমোদন দেওয়া হয়। ফলে দ্রুত সেবা চালু করতে পারল স্টারলিংক।

ইত্তেফাক/এএম