দক্ষিণী সিনেমার প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা কমল হাসান শুধু অভিনয়েই সীমাবদ্ধ নন—পরিচালক, প্রযোজক থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ হিসেবেও তিনি নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। তবে তার জীবনযাত্রায় একসময় এমন ঘটনাও ঘটেছে, যা অনেকেই কল্পনাও করতে পারবেন না—একসময় নাপিতের কাজও করেছেন তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-কে দেওয়া বক্তব্যে এই বিস্ময়কর তথ্য জানান কমল হাসান। চলচ্চিত্র সমালোচক অনুপমা চোপড়াকে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমি একটি সেলুনে কাজ করতাম, কিন্তু সেটা মূলত মাকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য।'
তিনি জানান, যিনি তাকে চুল কাটার কাজ শিখিয়েছিলেন, তাকে তিনি গুরু বলে সম্মান করেন। তবে এই কাজের পেছনে তার ছিল এক ব্যতিক্রমী উদ্দেশ্য। কমলের ভাষায়, 'আমার মা ভাবতেন আমি কিছুই করি না। বই পড়া আর সিনেমা দেখা—এসব তার চোখে কোনো কাজ নয়। তখনই ভাবলাম, এমন কিছু একটা করতে হবে যাতে তিনি লজ্জা পান। তাই নাপিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।'
১৯ বছর বয়সে পরিচালকের পথচলা শুরুর ইচ্ছা নিয়েও কথা বলেন কমল। সেই সময় তিনি যান বরেণ্য পরিচালক কে বালাচন্দরের কাছে। কমল স্মরণ করেন, 'তখন বালাচন্দর বলেছিলেন, পরিচালক হতে চাইলে সারা জীবন অটোরিকশায় ঘুরে বেড়াতে হবে। তবে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি বলেছিলেন, আমার মধ্যে নায়ক হওয়ার সব গুণ রয়েছে।'
কমল হাসানের পরবর্তী সিনেমা ‘থাগ লাইফ’ মুক্তি পাচ্ছে আগামী ৫ জুন। এটি তার জন্য একটি বিশেষ কাজ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর মণি রত্নমের সঙ্গে আবারও একসঙ্গে কাজ করেছেন তিনি এই ছবিতে।
মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ‘কালাথুর কান্নাম্মা’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেছিলেন কমল হাসান। ওই ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য তিনি পেয়েছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার—শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন কমল হাসান। তামিল ভাষার সিনেমাই তার অধিকাংশ কাজের মাধ্যম হলেও হিন্দি, বাংলা, তেলুগু, কন্নড় ও মালয়ালম সিনেমাতেও তিনি অসাধারণ দক্ষতায় নিজেকে উপস্থাপন করেছেন।
‘অপূর্ব রাগাঙ্গাল’, ‘মুন্দ্রাম পিরাই’, ‘হে রাম’, ‘দশাবথারাম’-এর মতো বহু কালজয়ী সিনেমায় অভিনয় করে দর্শকদের মনে গভীর ছাপ রেখে গেছেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনাতেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন কমল হাসান। তামিল পরিচালক বালাচন্দরের সহকারী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করার পর হিন্দি সিনেমা ‘চাচি ৪২০’-এর মাধ্যমে পরিচালক হিসেবে অভিষেক হয় তার, আর সেই সিনেমাতেই নিজের পরিচালন দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন তিনি।