গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার পৌর শহরে থানা থেকে মাত্র ২০০ মিটার দুরুত্বে পরপর দুই দফা চুরির ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ এলাকার ৬টি দোকানের মালামাল আত্মসাত করেছে দুর্বৃত্তরা। একের পর চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সবশেষ বৃহস্পতিবার (২২ মে) দিবাগত রাতে শ্রীপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মার্কেটের ৬টি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে।
এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা হলেন, পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামের মৃত মহর আলীর ছেলে ইদ্রিস (কসমেটিক্সের দোকান), একই গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে মানিক মিয়া (ইলেকট্রনিক্সের দোকান), খলিল মিয়ার ছেলে রাজিব মিয়া (টেইলার্স), পটকা গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন (টিউবওয়েলের দোকান), মৃত মুনসুর আলীর ছেলে আল আমিন (মোটরসাইকেলের গ্যারেজ), আব্দুল মজিদের ছেলে মনির হোসেন (মুদি দোকান)।
ভুক্তভোগীরা জানান, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে টিনের ছাউনি কেটে দোকানের ভেতরে ঢুকে নগদ টাকাসহ কয়েক লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায় দৃর্বৃত্তরা। সকালে তারা বিষয়টি বুঝতে পারেন। গত কয়েকদিন আগেও একই বাজারের আরফান মিয়ার ফ্লেক্সিলোডের দোকানের ১৭টি মোবাইল ও নগদ টাকা, মানিক মিয়ার ইলেকট্রনিক্স দোকানের মালামাল, মনির হোসেনের মোবাইল, সোহেল মিয়ার দোকানের মালামাল, থানার মোড়ের আমানের দোকানের মালামাল, খন্দকার মাসুদ মিয়ার মোবাইল সামগ্রী, নগদ টাকাসহ অর্ধ কোটি টাকার মালমাল চুরির অভিযোগ ওঠে।
এ ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার পায়নি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাজারের দোকানদার হানিফ অভিযোগ করেন, বাজারের পাশেই বিভিন্ন মাদক হাত বাড়ালেই পাওয়া যায়। ওই মাদকসেবীরাও চুরির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।
ব্যবসায়ী মানিক মিয়া বলেন, 'সমিতি থেকে কিস্তি নিয়ে দোকানে মালামাল নিয়েছিলাম। ঈদ উপলক্ষে দোকানে বেশ মালপত্র ছিল। পরপর ২ বার আমার দোকানে চুরি হয়েছে। আমি পথে বসে গেছি। বাজার পরিচালনা কমিটির লোকজন নিরাপত্তার কথা বলে মাস শেষে টাকা নেয়। কিন্তু বাজারের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত লোক নিয়োগ দেয় না। বিশাল এই বাজারের জন্য ৪/৫ জন লোক আছে। যাদেরকে বর্তমানে নিয়োজিত করেছে পাহারা দিতে এরা নৈশ প্রহরী হিসাবে অযোগ্য। কেউ প্রতিবন্ধী, কেউ বার্ধক্যজনিত দুর্বল, কেউ গরহাজির থাকে, কেউ খারাপ নেশাগ্রস্ত।
দোকানী আরফান মিয়া বলেন, এর আগে আমার দোকান থেকে ১৭টি মোবাইল ও টাকা চুরি হয়েছিল। এখণ পাশের দোকানগুলোতেও চুরি হয়েছে। এখানে কারো নিরাপত্তা নেই।
শ্রীপুরের পৌরসভার কমিশনার আব্দুল খালেক বলেন, 'শ্রীপুর থানার সামনে বাজারে ৫-৭ জন পাহারাদার থাকার পরও এভাবে দোকানে চুরি হয় সেটা অকল্পনীয়। পরপর চুরি হচ্ছে। আমাদের ধারণা পাহারারত ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বারবার চুরি হচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ চুরিতে জড়িত কিনা খতিয়ে দেখা উচিত। পাশাপাশি টহল পুলিশ থাকার কথা কিন্তু ওসি কেন এই টহলের ব্যবস্থা করছেন না, সেটা তিনিই ভালো জানেন। চুরি ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।'
শ্রীপুর বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, 'পাশাপাশি দোকানগুলোতে টিনের চাল কেটে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এবার থানায় খবর দেওয়ার পর একজন এসআই এসেছিলেন। তারা তদন্ত করেছেন। বাজারে নিয়োজিত নিরাপত্তা প্রহরীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।'
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, 'গরু চুরি ঠেকাতে উপজেলার গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে কয়েকটি জায়গায় আমি নিজেই টহলে ছিলাম। শ্রীপুর বাজারে চুরির খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ফোর্স পাঠানো হয়েছে। কেউ এখনও অভিযোগ করেনি। অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
থানার কাছাকাছি এলাকায় একের পর এক চুরির প্রশ্নে ওসি মহম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, 'বাজার নিরাপত্তা কমিটির পক্ষে যেহেতু তাদের নিজস্ব পাহারাদার নিয়োজিত আছে সেহেতু তাদেরই দায়িত্ব ছিল আমাদের জানানো। তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের টহল পুলিশ হাজির হতো।'