বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২
The Daily Ittefaq

দাবিতে অনড় ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’

  • এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলসহ ৪ দাবি
  • ২৪ ও ২৫ মে ভ্যাট–কর পূর্ণাঙ্গ ও কাস্টমসের ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কর্ম বিরতি
  • ২৬ মে থেকে সব রাজস্ব অফিসে ২৪ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা
আপডেট : ২৫ মে ২০২৫, ০১:২৮

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির সরকারি অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিলসহ চার দফা দাবিতে কঠোর আন্দোলনে নেমেছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’। আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২৪ ও ২৫ মে সারা দেশের কাস্টমস, ভ্যাট ও কর অফিসগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলছে। এ কর্মবিরতি সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। তবে কাস্টম হাউস ও এলসি স্টেশন এবং আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এই কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে। আগামী ২৬ মে থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত সকল রাজস্ব অফিসে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত ২২ মে বৃহস্পতিবার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এতে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলসহ চারটি দাবি তুলে ধরা হয়।

চারটি প্রধান দাবি হলো— ১. রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ২. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে। ৩. রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। ৪. এনবিআরের প্রস্তাবিত খসড়া ও পরামর্শক কমিটির সুপারিশের আলোকে অংশীজনদের মতামত নিয়ে টেকসই রাজস্ব সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। তারা জনসাধারণের সেবা ব্যাহত হওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন।

গত ১২ মে দিবাগত রাতে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে এনবিআর বিলুপ্তির ঘোষণা দেয় সরকার। এই অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এনবিআরের স্থলে দুটি নতুন বিভাগ—রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব বাস্তবায়ন বিভাগ—গঠনের কথা বলা হয়। এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, এই অধ্যাদেশ অত্যন্ত গোপনে ও দ্রুততার সঙ্গে জারি করা হয়েছে, যা জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।

তারা আরও অভিযোগ করেন, এটি সংবিধান ও রাজস্ব ব্যবস্থার স্বাতন্ত্র্যকে উপেক্ষা করে কিছু প্রভাবশালী মহলের স্বার্থে জারি করা হয়েছে। এতে রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

অন্যদিকে সরকার এনবিআরের দুর্বলতা ও ব্যর্থতাকে সংস্কারের যুক্তি হিসেবে তুলে ধরলেও এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের মতে, এনবিআরের অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে সফলভাবে রাজস্ব আহরণ করে এসেছে। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে যেখানে রাজস্ব আদায় ছিল ১৬৬ কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,৮২,৬৭৮ কোটি টাকায়।

তারা জানান, এনবিআর দেশের মোট অভ্যন্তরীণ রাজস্বের প্রায় ৮৬ শতাংশ আহরণ করে, যা দেশের উন্নয়ন ব্যয়ে বড় অবদান রাখে।

এনবিআরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তা প্রকৃত চিত্র নয় বলে দাবি করা হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের খানা জরিপ অনুযায়ী, কর ও কাস্টমস ২০২৩ সালে দুর্নীতির তালিকায় ১৪তম স্থানে ছিল, যা আগের বছরগুলোতে আরও নিচে ছিল। এনবিআর দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে বলে দাবি করা হয়।

স্মারকলিপিতে অভিযোগ করা হয়, রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে বিকল্প একটি খসড়া তৈরি করে তা জারি করা হয়। এতে এনবিআরের অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের মতামত বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এনবিআরের কর্মকর্তারা একাধিকবার এনবিআর চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তিনি সহযোগিতা করেননি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

এছাড়া টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান স্পষ্টভাবে বলেন যে, ‘অধ্যাদেশে রাজস্ব বোর্ডের বিকেন্দ্রীকরণের নামে সরকারের, বিশেষত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক উন্নত চর্চা অনুযায়ী, একটি দেশের রাজস্ব নীতি প্রণয়ন ও ব্যবস্থাপনার জন্য আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত পূর্বক স্বতন্ত্র সংস্থা, বোর্ড বা এজেন্সি করা প্রয়োজন, যাতে তা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাবের আওতামুক্ত থাকে।’ এছাড়াও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) থেকেও রাজস্ব কাজে অভিজ্ঞ কাউকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার প্রধান করার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে মতামত দেয়া হয়েছে এবং কর জিডিপি বাড়বে এমন কোন উদ্যোগের প্রতিফলন অধ্যাদেশে নেই বলেও জানানো হয়েছে।

ইত্তেফাক/এমএএম