ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পুঞ্চ জেলার মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ ইকবাল ৭ মে সীমান্তে গোলাগুলিতে নিহত হন। তার মৃত্যু মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইকবালের ছবি এবং নাম ব্যবহার করে বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী মিডিয়া তাকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
ইকবালের ভাই ফারুক আহমেদ জানান, তার ভাই একজন শান্তিপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন, যিনি গ্রামের শিশুদের পড়াতেন এবং কখনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু তার দাড়ি ও পোশাক দেখে কিছু মিডিয়া তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হওয়ার অপবাদ দেয় যা তাদের জন্য এক ধরনের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মৃতের ভাই ফারুক আহমেদ বলেন ‘আমরা আমাদের ভাইকে হারিয়েছি, তারপর মিডিয়া তাকে অপমান করেছে।’
গোলাগুলির পর সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে ভুল তথ্য ছড়ানোর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইকবালকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিতকরণসহ নানা ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশিত হয়েছে, যার মধ্যে ভারত পাকিস্তানের করাচি বন্দরের ধ্বংসের মিথ্যা খবরও ছিল। কিছু সংবাদ চ্যানেল এমন ভুল তথ্য প্রচার করেছিলো যে সরকার এবং স্থানীয় পুলিশ বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়।
পুঞ্চ পুলিশ এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানায়, ইকবাল একজন সম্মানিত ধর্মীয় শিক্ষক ছিলেন এবং তার কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক ছিল না। এমন ভুল তথ্য ছড়ানো বন্ধ করার জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের পরিবার এখনও শোকে ডুবে আছে। আমার ভাইয়ের দুই স্ত্রী ও আট সন্তান আছে, তিনি পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। সরকারের দেওয়া ক্ষতিপূরণ সাময়িক হলেও তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত।’
তিনি আরও জানান, তিনি মিডিয়া সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চান, তবে পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে এখন পর্যন্ত প্রক্রিয়া এগোয়নি। ইকবালের মতো সাধারণ মানুষ যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাতের শিকার না হয় এবং ভুল তথ্যের মাধ্যমে তাদের সম্মান নষ্ট না হয়, সেজন্য সামাজিক ও সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্বশীল আচরণ অত্যন্ত জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তানের দীর্ঘ দিনের দ্বন্দ্বের মাঝে সাধারণ মানুষের দুর্দশা এবং সংঘাতের সময়ে ভুল তথ্যের ভয়াবহ প্রভাবের একটি কালো উদাহরণ।
তথ্যসূত্র: বিবিসি