শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

শিশু আইন সংশোধনে কাজ করছে আইন কমিশন: বিচারপতি জিনাত আরা

আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ২১:৫১

সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) অর্জনে গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষায় আইন প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা। 

তারা বলেছেন, বিদ্যমান আইনি কাঠামোর দুর্বলতা এবং নীতিমালাসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ায় গৃহকর্মী শিশুরা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তাই নতুন আইন প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করা জরুরি। আর আইন কমিশনের প্রধান বিচারপতি জিনাত আরা মনে করেন শিশুকে আইনী সুরক্ষা দিতে হলে আইনের মধ্যে কোন অসঙ্গতি থাকলে তা আগে ঠিক করতে হবে। তাই শিশু সুরক্ষা আইন এবং সংবিধানের সঙ্গে যে সাংঘর্ষিক বিষয় আছে তা দূর করতে হবে। এই সমস্যা দূর করতে কাজ করছে আইন কমিশন।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষায় সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক সংলাপে এ সব কথা বলেন তারা। 

উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি), শাপলা নীড় ও এডুকো-বাংলাদেশ আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি জিনাত আরা। 

এএসডি’র নির্বাহী পরিচালক এম এ করিমের সভাপতিত্বে সংলাপে বক্তৃতা করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব সারাওয়াত মেহজাবীন, শিশুশ্রম নিরোধ জাতীয় কমিটির কো-চেয়ার অ্যাডভোকেট সালমা আলী, আইএলও বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার সৈয়দা মুনিরা সুলতানা, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমকো উচিয়ামা, এডুকোর কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল হামিদ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রোটেকশন স্পেশালিস্ট শাবনাজ জাহরীন, এডুকোর ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম, আইএলও’র ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সৈয়দা মনিরা সুলতানা, শিশু অধিকার ফোরামের ভাইস-চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান কামাল, ইনসিডিনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক অ্যাডভোকেট রফিকুল আলম, এএসডি’র প্রকল্প পরিচালক ইউকেএম ফারহানা সুলতানা প্রমূখ।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উত্থাপন করেন শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন খান। তিনি বলেন, এসডিজি’র আলোকে ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। অথচ গৃহকর্মী শিশুদের প্রতিনিয়ত মারধরসহ নানা নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে। তাই দেশের নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় সরকারের ওই প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করার জন্য যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং তার সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বিচারপতি জিনাত আরা বলেন, গৃহকর্মে নিযুক্ত শিশুদের জন্য উদ্যোগ তেমন করে দেখা যায় না। ৪৩টি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমের তালিকায় নেই গৃহশ্রম। ৪ লাখ ২০ হাজার শিশু গ্রহশ্রমে নিযুক্ত। সরকারের বিনামূল্যে শিক্ষার সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত। তারা শারিরীক নির্যাতন ও ধষণের শিকার হয়ে বিচার পায়না। পূর্বের সরকার শিশু শ্রমে নিযোজিত শিশুদের জন্য খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেনি। শিশুশ্রম বন্ধ করতে হলে শ্রমে নিযুক্ত শিশুদের দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি সরকার বেসকারি উন্নয়সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবে শিশুদের পাশে দাড়ানো আহবান করেন। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ নয়, সকল প্রকার শিশুশ্রম বন্ধে সকলকে কাজ করার জোর দাগিদ দেন তিনি।

গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর গুরুত্বারোপ করেন এম এ করিম। 

সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আলোকে সরকার ২০২৫ সনের মধ্যে সব ধরনের শিশু শ্রম নিরসনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সরকারের এই প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশু গৃহকর্মীর অধিকার ও সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন ও তার সফল বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

ইত্তেফাক/এএইচপি