রোববার, ২০ জুলাই ২০২৫, ৪ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

পরিবারকে ভিডিও কলে রেখে প্রবাসী হিরো আলমের আত্মহত্যা

আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ১৬:৩৯

প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ধারদেনা ও সম্পদ বিক্রি করে এক বছর আগে স্থানীয় এক আদম ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সৌদি আরব যান মো. রাজিব মিয়া ওরফে হিরো আলম (৩২)। দেনাদারের তাগাদা পেয়ে দেশে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে সোমবার (২ জুন) সকালে পরিবারের সঙ্গে কথা বলার শেষে আত্মহত্যা করেছেন।

সরেজমিনে হিরো আলমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, চারপাশজুড়ে শোকের ছায়া। হৃদয়বিদারক পরিবেশে কাঁদছেন তার ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা আনোয়ারা বেগম। হিরো আলমের পরিবার জানায়, তাকে সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের উত্তর গোবিন্দপুর গ্রামের মো. আজিজুল।

প্রায় পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে তার মাধ্যমেই হিরো আলম এক বছর আগে সৌদি আরবের দাম্মামে পাড়ি জমান। প্রতিশ্রুতি ছিল একটি ফ্যাক্টরিতে মাসিক ৪০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি হবে।

কিন্তু বাস্তবে সেখানে গিয়ে আকামা না থাকায় কোনো কাজ পাননি তিনি। অবশেষে ভাইয়ের সহায়তায় কোনোমতে টিকে থাকলেও মাস শেষে নিজের খরচই মেটানো সম্ভব হচ্ছিল না। এদিকে দেশে থাকা পরিবার ঋণের চাপে পড়ে যায়। 

পাওনাদারেরা বারবার স্ত্রী চাঁদনি বেগমের কাছে টাকা দাবি করতে থাকেন। পরিবার চরম বেকায়দায় পড়ে। এই অবস্থায় হিরো আলম স্ত্রীকে জানিয়ে দেন, তার পক্ষে দেশে টাকা পাঠানো সম্ভব নয়, কারণ নিজেই খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। 

হিরো আলমের ভাবি নিপা আক্তার জানান, সোমবার সকাল ১১টার দিকে হিরো আলম ভিডিও কলে তার মোবাইলে কল করেন। প্রথমে স্ত্রী চাঁদনির সঙ্গে দুই মিনিট কথা বলেন। সেখানে টাকা পাঠানো নিয়ে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। 

এরপর হিরো আলম ফোনটি ভাবির হাতে দিতে বলেন এবং জানান, দেশে টাকা পাঠানোর কোনো উপায় নেই। সেই সঙ্গে মাকে ও দুই সন্তানকে দেখে রাখার অনুরোধ জানান। পরে তিনি বড় মেয়ে আশা মনি (১২) ও ছোট মেয়ে হাবিবা আক্তার (৭)-এর সঙ্গেও কথা বলেন। ছোট মেয়ে হাবিবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে একটি গাছে ফাঁসিতে ঝুলে যান এবং মর্মান্তিক পরিণতি ঘটে। 

এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর সৌদি আরবে অবস্থান করা বড় ভাই আরিফুল ইসলাম ফোন করে ভাই হিরো আলম ফাঁসিতে ঝুলে মারা যাওয়ার বিষয় নিশ্চিত করেন।

এলাকাবাসীর ভাষ্য, হিরো আলম ছিলেন শান্ত স্বভাবের ও পরিশ্রমী একজন মানুষ। পরিবার-পরিজনের সুখের আশায়, জীবনের পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতারক আদম ব্যবসায়ীর মিথ্যা আশ্বাসে পড়ে সব শেষ হয়ে গেল।

তারা জানান, শুধু হিরো আলম নয়—এভাবেই অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, কিন্তু কেউ বিচার পান না। এ ঘটনার জন্য হোসেনপুরের আদম ব্যবসায়ী মো. আজিজুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন তারা।

আজিজুলের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংক্ষেপে বলেন, 'কোনো কর্মীকে পাঠানোর তিন মাস পর থেকে আমার আর কোনো দায়িত্ব নেই।' এরপর তিনি ফোন কেটে দেন।

ইত্তেফাক/আইএ