শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

‘তাণ্ডব’ প্রদর্শনকালে ছায়াবাণী হলে ভাঙচুর ও লুটপাট, কারিগরি ত্রুটিতে দর্শকের ক্ষোভ

আপডেট : ০৮ জুন ২০২৫, ১০:৫০

শাকিব খান অভিনীত 'তাণ্ডব' সিনেমা প্রদর্শনের সময় কারিগরি ত্রুটির কারণে উত্তেজিত দর্শকরা ময়মনসিংহের ছায়াবাণী সিনেমা হলে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। ঘটনার সময় লুটপাটেরও অভিযোগ উঠেছে।

ঈদের দিন শনিবার (৭ জুন) বিকালে নগরীর সি কে ঘোষ রোডের পুরনো এই হলটিতে ছবির শেষ দিকে হঠাৎ করে স্ক্রিন বন্ধ হয়ে গেলে ক্ষুব্ধ দর্শকরা হলের ভেতর-বাইরে ভাঙচুর শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়।

হলের দুই তলার সাড়ে সাতশ’ আসনের মধ্যে সাড়ে তিনটার শো চলাকালে কারিগরি সমস্যা দেখা দিলে সিনেমা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ক্ষুব্ধ দর্শকরা চেয়ার ছুড়ে মারাসহ পোস্টার, আসন, টিকিট কাউন্টারের দরজা-জানালায় ভাঙচুর চালায়। ফলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত শো বন্ধ রাখা হয়।

শেরপুর থেকে সিনেমা দেখতে আসা দর্শক আল-আমীন হোসেন বলেন, 'এই এলাকার মধ্যে ছায়াবাণী হলটাই একটু ভালো। কিন্তু ঈদের মত বিশেষ সময়ে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি না নিয়েই কিভাবে সিনেমা চালানো হলো? টিকিট কিনতে গিয়ে সমস্যা, হলের ভেতরে পানি, আর সিনেমা শেষ না হতেই বন্ধ হওয়া—এসব একসঙ্গে মানা যায় না।'

আরেক দর্শক হাসান জাকির অভিযোগ করেন, 'শো শেষ না হলেও কর্তৃপক্ষ একের পর এক টিকিট বিক্রি করছিল। ছবির সময় কখনো সাউন্ড থাকছে না, কখনো স্ক্রিন নিভে যাচ্ছে—এতে সবাই রেগে গেছে। তাণ্ডব তো হিট সিনেমা, স্বাভাবিকভাবে দর্শকের প্রত্যাশাও বেশি।'

হলের ক্যাশিয়ার আল-আমীন শেখ বলেন, 'প্রযুক্তিগত সমস্যা আগাম বলা যায় না। সমস্যা দেখা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সমাধান করা হয়েছিল। কিন্তু দর্শকরা যেভাবে ভাঙচুর করেছে, সেটা একেবারে অনিয়ন্ত্রিত। দোতলা থেকে চেয়ার ছুড়ে মারা হয়েছে, যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। তারা ক্যাশ কাউন্টারও ভেঙে টাকা নিয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে হলে ছবি চালানোই কঠিন হয়ে যায়।'

ময়মনসিংহ মহানগর পুলিশের তিন নম্বর ফাঁড়ির এএসআই মো. রাসেল জানান, 'খবর পাওয়ার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। সাময়িক উত্তেজনায় এমন ঘটনা ঘটেছে। সমস্যা হতে পারে, কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া উচিত নয়।'

এক সময় ময়মনসিংহ শহরে অজন্তা, ছায়াবাণী, অলকা, পূরবী ও সেনা অডিটরিয়ামসহ পাঁচটি সিনেমা হল ছিল। আশির দশকে এসব হলগুলো ছিল জনপ্রিয়। কিন্তু মানহীন সিনেমা, দর্শক কমে যাওয়া এবং ২০০২ সালে সিনেমা হলে বোমা হামলার ঘটনায় ধীরে ধীরে হলগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমানে শুধু ছায়াবাণী হলটি টিকে আছে। পূরবী হল ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। বছরের বেশিরভাগ সময় দর্শকশূন্য থাকা ছায়াবাণী হল ঈদের সময় কিছুটা জমে ওঠে। এবারের ঈদে ‘তাণ্ডব’ ছবির কারণে দর্শকের চাপ বাড়ে, যা সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় হল কর্তৃপক্ষকে।

ইত্তেফাক/টিএইচ