দেশের ফুটবলে নতুন জাগরণ। হামজা-শামিত-ফাহামিদুলদের দলে অন্তর্ভুক্তিতে প্রাণ ফিরেছে লাল-সবুজের ফুটবলে। যা দেখা গেছে মঙ্গলবার জাতীয় স্টেডিয়ামে সিংগাপুরের বিপক্ষে এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচে। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা তিনেক আগেই হাউজফুল গ্যালারি, তারও ঘণ্টা তিনেক আগ থেকে লাইনে দাড়িয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশের অপেক্ষা।
গ্যালারি থেকে খেলোয়াড়দের নাম ধরে গর্জন কি ছিল না মাঠে? বাংলাদেশ দলও সমর্থকদের খুশি করতে খেলেছে দাপটের সঙ্গেই। তবে জয় ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি হামজা-শামিতদের। তিন পয়েন্টের আশায় নেমে এক পয়েন্টও জোটেনি বাংলাদেশের। হেরেছে ২-১ গোলের ব্যবধানে।
তবে গল্পটা হতে পারত অন্যরকম যদি বিতর্কিত রেফারিংয়ের শিকার না হতো স্বাগতিকরা। পুরো ম্যাচেই লাল-সবুজের বিপক্ষে ছিল রেফারির সিদ্ধান্ত, মাঝে তো লম্বা সময়ের জন্য খেলা বন্ধ করে বাংলাদেশের মোমেন্টটার্মও নষ্ট করেছে চতুর্থ রেফারি শুধু তাই নয়, ম্যাচের শেষ মুহূর্তে বক্সের ভেতর হওয়া ফাউলও দেননি রেফারি। আর এসব অভিযোগ নিয়েই এএফসির কাছে নালিশ করার কথা ভাবছে বাফুফে।
মঙ্গলবার মাঠে প্রায় ২১ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিল, খেলা শুরুর হওয়ার আগ থেকেই সমর্থকরা গর্জন করছিল দলের নাম ও খেলোয়াড়দের নাম ধরে। তবে খেলার ৫৮ মিনিটে দুই গোল হজম করে পিছিয়ে পরে বাংলাদেশ। তবে লড়াই থামিয়ে দেয়নি। ৬৭ মিনিটে হামজার বাড়ানো বল সিংগাপুরের গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে জালে জড়ান রাকিব হোসেন। তাতে দলের চোখে মুখে ভেসে উঠল ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা। একের পর আক্রমণে নাকাল করে ফেলেছিল সফরকারীদের রক্ষণভাগ।
ঠিক সেই সময়ে খেলোয়াড় পরিবর্তনের ঘটনায় খেলা বন্ধ হয়ে থাকে প্রায় ৭-৮ মিনিট। ম্যাচের চতুর্থ রেফারির খামখেয়ালির কারণে লম্বা সময় খেলা হয়ে থাকায় এক সময় মেজাজ হারিয়ে ফেলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল হামজা চৌধুরীও। এত সময় খেলা বন্ধ থাকায় ম্যাচের গতিতে ভাটা পড়ে।
সে সময়ের ঘটনা জানিয়ে গতকাল গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জাতীয় দলের ম্যানেজার আমের খান বলেন, 'দুই দলই খেলোয়াড় পরিবর্তন করার বোর্ড দিয়েছিল রেফারির কাছে। আমরা দিয়েছিলাম আগে। একই সঙ্গে দুই জন-তিন জন পরিবর্তন করা যায়, আমরা দুই জন করতে গিয়েছিলাম বোর্ড ছিল চারটা... তবে সেসময় রেফারি ওদের খেলোয়াড় নামিয়ে দিচ্ছিল। ওরা কিন্তু আমাদের আগে যায়নি পরিবর্তন করতে তবুও রেফারি তাদেরটাই আগে পরিবর্তন করছিল।'
এ সময় তিনি আরো জানান যে, খেলাটি বন্ধ ছিল ম্যাচের ফোর্থ রেফারির জন্য। বলেন, 'এটা ম্যাচের চতুর্থ রেফারির গাফলতি ছিল। এটা নিয়ে আমরা অভিযোগ জানিয়েছি ম্যাচ কমিশনারের কাছে। মাঠের যে রেফারি ছিল সেও আমাদের পক্ষে কথা বলছিল। এই জিনিসটা নিয়ে ফোর্থ রেফারি খামাকা বলছিল, যে না মাত্র একজন পরিবর্তন করতে পারব। এটা নিয়েই সময়ক্ষেপণ করেছে তারা।'
সেখানেই শেষ নয় ম্যাচের একবারে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলাদেশ একের পর এক আক্রমণ করেছে। ম্যাচ শেষের কিছুক্ষণ আগে রেফারির একটি সিদ্ধান্ত বদলে দিতে পারত ম্যাচের ফলাফল। ম্যাচের ৯৩তম মিনিট সিংগাপুরের ডি-বক্সের ভেতরে ফাউল করা হয় মোহাম্মদ ফাহিমকে। বাংলাদেশ দল সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির আবেদন করেন রেফারির কাছে। তবে ম্যাচ রেফারি সেই পেনাল্টি দেননি।
এ নিয়ে রেফারির সিদ্ধান্ত জন্ম দিয়েছে সমালোচনার। শুধু তাই নয়, ম্যাচে রেফারির আচরণে অসন্তুষ্ট বাংলাদেশ দলের ফুটবলার থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্ট পর্যন্ত। ম্যাচ রেফারির বিরুদ্ধে এএফসি কাছেও নালিশ দিতে আলোচনার হবে বাফুফের পরবর্তী বোর্ড সভায়। জাতীয় ফুটবল দলের ম্যানেজার আমের খান বলেন, 'আমরা অবশ্যই অভিযোগ করব। যতটুকু জানানোর, আমরা ততটুকু ম্যাচ কমিশনারকে জানিয়ে রেখেছি। তিনি বিষয়টি লিখিত রেখেছেন।'
এদিকে ম্যাচ শেষে বুধবার ভোরেই ঢাকা ছেড়েছেন হামজা চৌধুরী ও শামিত সোম। গতকাল ভোরে হামজা ইংল্যান্ডে ও শমিত কানাডার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। ভোর ৬টায় তাদের ফ্লাইট ছিল। এছাড়া অন্যরাও হোটেল ছেড়েছেন সকালে।
এ বিষয়ে আমের খান বলেন, 'হামজ আর শামিতের ফ্লাইট ছিল ভোর ৬টা ৪০ মিনিটে, আর তারা রাত ৪টায় হোটেল ত্যাগ করেছেন। তার আগে রাতে সবাই একসঙ্গেই ডিনার করেছেন। পরে বুধবার সকালে ক্যাম্প ক্লোজ করা হয়েছে।' তবে দলের ইতালি প্রবাসী ফাহামিদুল এখনো বাংলাদেশে রয়েছেন।
অবস্থান সম্পর্কে ম্যানেজার আমের খান বলেছেন, 'ফাহামিদুল তার পরিবারের সঙ্গে দেশে সময় কাটাবেন। তিনি ইতালির উদ্দেশে রওনা হননি।' জানা গেছে এদিন নিজ দেশ স্পেনে ফিরে গেছেন দলের হেড কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরাও। এ নিয়ে টিম ম্যানেজার জানিয়েছেন, 'কোচ হাভিয়ের বুধবার সকালে রওনা হয়েছেন। অন্য কোচিং স্টাফরাও ফিরে যাবেন।'