ঈদুল আজহার টানা সরকারি ছুটির প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ধস নেমেছে। বন্দরে গড়ে দৈনিক প্রায় পাঁচ হাজার কনটেইনার জাহাজ থেকে খালাস হয়। কিন্তু বন্ধের মধ্যে সেটা অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে। একইসঙ্গে বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি ও রপ্তানি কনটেইনার প্রবেশও কমে গেছে।
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ছুটি শুরুর আগে ৪ জুন বন্দরে আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার (প্রতিটি ২০ ফুট লম্বা)। বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত তা ৩৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। তার মানে ছুটির এ সময়ে গত সাত দিনে জমেছে ১১ হাজার কনটেইনার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদের আগে গত মে মাসে কাস্টমসের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের কলমবিরতি ও পরিবহন ধর্মঘটে বন্দরে জাহাজজট তৈরি হয়েছিল। বন্দর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগেই শুরু হয় ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি। ছুটিতে বন্দর সচল থাকলেও ব্যবসায়ীদের পণ্য খালাস কমে গেছে। তাতে এখন আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনারের স্তূপ বাড়ছে। ব্যবসায়ীরা দ্রুত পণ্য খালাস না করলে বন্দরে জট আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর তাতে সেবার মান ব্যাহত হওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, বন্দরের কনটেইনার রাখার ধারণক্ষমতার ৮০ শতাংশ জায়গায় এখন কনটেইনার রাখা হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় এই জায়গা কমে আসছে। কনটেইনার রাখার জায়গা কমলে পণ্য খালাস কার্যক্রমসহ বন্দর পরিচালন কার্যক্রমে সময় বেশি লাগে। তাতে পণ্য হাতে পেতে ব্যবসায়ীদের সময় লাগবে বেশি।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বুধবার পর্যন্ত কনটেইনার ডেলিভারিতে একটু সমস্যা ছিল। তবে আমরা স্মুথলি জাহাজ থেকে খালাস করে গেছি। বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি অনেকটাই ডেভেলপ করেছে। বন্দরের অভ্যন্তরে ৪১ হাজার বা তার কিছু বেশি কনটেইনার আছে। আমাদের স্পেস এখনও পর্যাপ্ত আছে। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। বর্হিনোঙ্গরে মাত্র ১১টি জাহাজ ওয়েটিংয়ে আছে। ছুটি শেষ হওয়ার পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে গত ৫ জুন থেকে সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে, যা ১৪ জুন পর্যন্ত চলবে। এত দীর্ঘ ছুটির কারণে বন্দরে অপারেশনাল কার্যক্রমে অচলাবস্থা তৈরি এবং আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে মারাত্মক প্রভাবের আশঙ্কা করে আসছিলেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা।
এ আশঙ্কাকে আমলে নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ ঈদুল আজহার টানা ছুটিতে সম্ভাব্য অচলাবস্থা মোকাবিলায় ১০টি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রাম বন্দরে শুধুমাত্র ঈদের দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কিন্তু এরপর থেকে আগের মতোই ২৪ ঘণ্টা সচল আছে বন্দর।