এএফসি এশিয়া কাপ কোয়ালিফায়ারের ম্যাচে গেল ১০ জুন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হারের পর বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এই হারের জন্য সাবেক ফুটবলারদের অনেকে দায়ী করছেন হ্যাভিয়ের কাবরেরার কৌশলকে। সেই সমালোচনার আওয়াজ এবার স্পষ্ট হলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ভেতরেও।
গতকাল রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত বাফুফের 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জাতীয় দল কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া শাহিন সরাসরি কাবরেরার পদত্যাগ দাবি করেন। উপস্থিত নির্বাহী কমিটির ১৪ সদস্যের সামনে সাখাওয়াত দাবি তোলেন, 'আমার একটাই এজেন্ডা, কাবরেরার পদত্যাগ চাই।' পরে তিনি দাবি করেন জাতীয় দলের কোচ কাবরেরা খেলাই বোঝেন না।
শুধু নির্বাহী সদস্যই নন, শাহিন বাফুফের জাতীয় দল কমিটির সদস্যও। তাই তার বক্তব্যকে নিছক ব্যক্তিগত মত হিসেবে দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা। বরং অনেকেই মনে করছেন, এটি ফেডারেশনের ভেতর থেকেই উঠে আসা একটি বড় বার্তা। শনিবার বাফুফের এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল, নতুন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার কর্মকাণ্ড ও পরবর্তী ছয় মাসের পরিকল্পনা সম্পর্কে সবাইকে খানিকটা ধারণা দেওয়া, যা পুরো সময় জুড়েই একে একে বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা কমিটি প্রধানরা জানিয়েছেন।
একপর্যায়ে মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে পান বাফুফের নির্বাহী সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া। তাকে আহ্বান জানানো হয়েছিল মূলত বাফুফের অভ্যন্তরীণ অডিট ও সরকারি সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনার জন্য। কিন্তু তিনি সরাসরি সে প্রসঙ্গে যাননি। বরং অডিট বা প্রশাসনিক প্রস্তাবের গণ্ডি ভেঙে তিনি বিস্ফোরক এক দাবি তোলেন। সাখাওয়াত বলেন, 'আমার এজেন্ডা অডিট নয়। আমার একমাত্র এজেন্ডা জাতীয় দল। এই কমিটির একজন সদস্য হিসেবে স্পষ্ট করে বলছি, আমি কাবরেরার পদত্যাগ চাই। এটা ১৮ কোটি মানুষের দাবি। আমি ১৮ কোটি মানুষকে মুক্ত করতে চাই।'
সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে পরদিনই স্পেনে ছুটিতে চলে গেছেন কাবরেরা। ম্যাচের আগে কয়েক দিন দলের সঙ্গে থাকা ছাড়া বেশির ভাগ সময় তিনি ছুটিতেই থাকেন, যা নিয়ে অভিযোগ শাহিনের। পরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এ বিষয়ে তিনি বলেন, 'বিগত সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা একটা কোচকে লালন-পালন করছি। অনেক টাকা তাকে বেতন দিচ্ছি, তিনি হুট করে আসেন আবার হুট করে চলে যান। তিনি ঘরোয়া লিগের একটা খেলাও দেখেন না। শুধু তিনি নন তার পুরো কোচিং স্টাফদেরও একই অবস্থা। কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচের ১০ দিন আগে দেশে এসে একটি দল করে। সবশেষ ম্যাচের আগেও তিনি দেশে এসে ৩৫ জনের একটি লিস্ট করেছিল পরে ক্যাম্পে ডেকেছিলেন ৩০ জনকে, বাকিদের ডেকে আর রাখেননি এটা তো তিনি পারেন না। একটি খেলোয়াড়কে যখন ডাকা হয় তখন তার খেলা দেখবে, অনুশীলন দেখবে তারপর বাদ দিবে এসব না দেখে শুধু কল করেই বাদ দিতে পারেন না। তাতে বোঝা যায় তার কোনো যোগ্যতা নেই। তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেও কোনো আউটপুট নেই।' এ সময় শুধু কাবরেরা না পুরো কোচিং স্টাফের পরিবর্তন দাবি করেন তিনি।
শুধু কাবরেরার আসা-যাওয়া নিয়ে অভিযোগ নয় শাহিনের দাবি, বাংলাদেশ জাতীয় দলের হেড কোচ মাঠের খেলাই বোঝেন না। তিনি বলেন, 'কাবরেরা খেলা বোঝেন না, তার কোচিং দেখে সন্তুষ্ট হওয়া তো পরের বিষয়। সিঙ্গাপুর আমাদের সঙ্গে আহামরি ভালো খেলেনি। খেলার আগে বৃষ্টি হয়েছিল, সিঙ্গাপুর খেলতে পারছিল না। তবুও আমরা ফলাফল আনতে পারিনি শুধু তার (কাবরেরা) খেলোয়াড় পরিবর্তন ও টেকনিক্যাল কারণে এবং তার মাথায় ঐটুকু জ্ঞান নেই যে কোন পজিশনে কাকে কীভাবে খেলালে ম্যাচের ফলাফল আসবে। সে পুরোপুরি একটা অ্যাবনরমাল। এই জন্যই আমি তার পদত্যাগ চাইছি।'
এদিকে কাবরেরার পদত্যাগ দাবি করে বাফুফে সদস্যের দেওয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে সভাপতি তাবিথ আউয়াল নিয়েছেন সতর্ক অবস্থান। তার কথা, 'বিষয়টা নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলবো। কোচের কাজের পর্যালোচনা হবে। সেটা হওয়ার পর কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে নেওয়া হবে। তার আগ পর্যন্ত যেভাবে চলছে সেভাবে চলবে।'