দেশের ফুটবলে আগে কোনো সময় যা হয়নি সেটাই করলো বাফুফে। বড় আয়োজন করে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে জবাবদিহিতা করলো নিজেদের কর্মকাণ্ডের। নির্বাচনের আট মাস পর 'মিট দ্য প্রেস' আয়োজন করলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। যেখানে সংস্থাটির সভাপতি তাবিথ আউয়াল তার দায়িত্বের সময় হওয়া ফুটবলে সাফল্য নিয়ে কথা বললেন, একই সময় তার ব্যর্থতা তুলে ধরলেন। পাশাপাশি দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিলেন, আগামী ছয় মাসের জন্য নিজেদের করা পরিকল্পনাও তুলে ধরলেন।
সরকারের কাছে কিছু দাবি-দাওয়াও তুলে ধরলেন। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বাফুফের অন্য পদের প্রধানরাও। তারা দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে শুরু করে নিজেদের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দেওয়ার পাশাপাশি আগামী ছয় মাসের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা। দেশের ফুটবলে এর আগে কখনই এমনটি দেখা যায়নি।
গতকাল রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে 'মিট দ্য প্রেস' আয়োজন করে বাফুফে। সেখানেই ক্রীড়াঙ্গনে সরকারের বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের বিষয়টি তুলে ধরে বাফুফে প্রধান কথা বলা শুরু করেন। বাস্তব প্রেক্ষাপট তুলে ধরে দেখিয়ে দেন এই বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। একই সঙ্গে তিনি ক্রীড়া খাতে বাজেট বরাদ্দ ও ট্যাক্স আরোপ নিয়ে ক্রীড়া ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
তিনি বলেন, 'নির্বাচনের পর এই আট মাসের সফলতা বা ব্যর্থতা তুলে ধরার জন্য এই আয়োজন। আমি মনে করি, জবাবদিহিতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। ছয় মাস পর পর এমন আয়োজন হলে জবাবদিহিতা থাকে। দেখুন, বাজেটে ক্রীড়া ক্ষেত্রের বরাদ্দ নিয়ে তেমন কথা হয় না। ২ হাজার কোটি টাকার যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তার ৯০০ কোটি চলে যায় বেতন ও মেইন্টেনেন্স, অপরারেশনাল ও অন্যান্য বিষয়ে। বাকিটা উন্নয়নমূলক কাজে লাগে। অনেক কাঠামো পুরোনো, অকেজো, এখানে সংস্কার কাজ করে, মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে আর কতদিন, এখানে আমার মনে হয়, পুরোনো কাঠামোগুলো ভেঙে নতুন করে তৈরি করলে ক্রীড়াঙ্গনের জন্য কাজে আসবে। ক্রীড়া পণ্যের ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ ট্যাক্স আমাদের দেশে, এটা যেন বিবেচনা করা হয়। মওকুফ করা হয় বা কমানো হয়। ভারতে এই ট্যাক্স মাত্র ১২ শতাংশ।'
এ সময় সারা দেশে বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলো আয়োজনের সফলতা থাকলেও তাবিথ স্বীকার করে নিয়েছেন, জেলভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারেননি নানা সীমাবদ্ধতায়। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তার কমিটি গোটা দেশে নানা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছেন বলে জানিয়েছেন। বলেন, 'ফুটবলেকে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছি। চরে, পাহাড়ে, বিচে, রাস্তায় এবং অবশ্যই মাঠে বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৪ ফুটবল চলছে। ইয়ুথ ডেভেলপমেন্টে জোর দেওয়া হয়েছে। জেলা ফুটবল আমরা চালু করতে পারিনি। এমন নয় যে, বিষয়টা আমরা এড়িয়ে গেছি, আমরা চেয়েছি বয়সভিত্তিক দিয়ে শুরু করতে। এরপর ধাপে ধাপে জেলা, আন্তঃজেলা শুরু করতে চাই।'
গেল কয়েক মাসে দেশের ফুটবলে নতুন জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ঘুমন্ত ফুটবল জেগে উঠেছে। লাল-সবুজের জার্সিতে হামজা-সামিত-ফাহমিদুলদের অন্তর্ভুক্ত করাতে বদলে গেছে পুরো ফুটবলের চিত্র। যাতে করে বাফুফেরও ওপরও বেড়েছে চাপ। এখন আর বিগত বছরগুলোর মতো ইনিয়ে বিনিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। দেশের সবার চোখ এখন জামাল-তপুদের দিকেই সেটা বুঝে গেছে তাবিথ। তাই দলকে আরও উন্নতির দিকে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বাফুফে।
চলতি মাসে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের আগে জামাল-হামজারা খেলেছেন। সমমানের দল ভুটানের বিপক্ষে জিতেছিলও ঐ ম্যাচ। তবে সেই ফলাফল মূল ম্যাচে টেনে আনতে পারেনি। সিঙ্গাপুরের কাছে হারতে হয়েছে ২-১ গোলে। তাই দলের উন্নয়নে পুরুষ দলের জন্যও প্রীতি ম্যাচে শক্ত প্রতিপক্ষ চান তাবিথ। সভাপতি বলেন, 'ফ্রেন্ডলি ম্যাচের ক্ষেত্রে আমাদের ভাবনা আরও শক্তিশালী দলগুলো বিপক্ষে খেলা, যাতে দল আরও উন্নতি করতে পারে। এখন আমরা এশিয়ান কাপের জন্য লড়াই করছি। ভবিষ্যতে অলিম্পিক কোয়ালিফাই আসবে, বিশ্বকাপ বাছাই আসবে, সেক্ষেত্রে প্রস্তুত হওয়ার জন্য ঐ মানের দলের বিপক্ষে খেলতে হবে। আমাদের দলের খেলা, মাঠ, জার্সি ইকুয়েপমেন্ট 'নিম্নমানের' ছিল বলে অভিযোগ ছিল, সেখানেও আমরা উন্নতি করছি। এখন আমাদের চাওয়া বাংলাদেশ দল যখন মাঠে নামবে, তখন যেন পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে, সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে।'
শুধু সভাপতি নয়, তাবিথের কমিটিতে থাকা বিভিন্ন কমিটির প্রধানরাও এ দিন উপস্থিত ছিলেন। তারাও গেল কয়েক মাসে নিজেদের পরিচালনা করা কার্যক্রমের কথা জানিয়েছেন। এ সময় ব্যর্থতা ও সফলতার কথা উল্লেখ করেছেন পাশাপাশি আগামী ছয় মাসের জন্য নিজেদের করা পরিকল্পনা সম্পর্কেও ধারণা দিয়েছেন তারা।