বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
The Daily Ittefaq

ভুয়া চুক্তিনামা দিয়ে চিকিৎসক বন্ধুকে ফাঁসানোর অভিযোগ দুই বন্ধুর বিরুদ্ধে

আপডেট : ১৫ জুন ২০২৫, ২২:৩০

ডেন্টাল চিকিৎসার সামগ্রী সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানের চুক্তিনামা ও বাণিজ্যিক লাইসেন্স বানিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মতিউর রহমান রকি ও হিসাবরক্ষক ইলিয়াছ হোসেন ‘টিথ টেক ডেন্টাল সাপ্লাই’ নামের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চীন থেকে আমদানি করা ডেন্টাল চিকিৎসার সামগ্রী চুরি করে বলে অভিযোগ করেন ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক ডাঃ রাশেদ নিজাম। পরবর্তীতে তারা ‘টিথ টেক ডেন্টাল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া চুক্তিনামা ও ট্রেড লাইসেন্স তৈরি করেন বলে ওই চিকিৎসক অভিযোগ করেন। তবে অভিযোগকারী চিকিৎসক ও অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি পরস্পর বন্ধু। তারা নোয়াখালীর রামগঞ্জে এক সাথে পড়াশুনা করেছেন।  

চুক্তিনামায় ‘টিথ টেক ডেন্টাল সাপ্লাই’ প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মতিউর রহমান রকি ‘টিথ টেক ডেন্টাল’ নামের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এবং ‘টিথ টেক ডেন্টাল সাপ্লাই’ নামের প্রতিষ্ঠানের এমডি ডাঃ রাশেদ নিজামকে দ্বিতীয় অংশীদার এবং ইলিয়াছ হোসেনকে তৃতীয় অংশীদার করা হয়। চুক্তিনামায় বলা হয়, কোম্পানিতে তিন জন সমহারে প্রদান করে ৩ কোটি টাকা লগ্নী করা হয়। পরবর্তীতে এই চুক্তিনামা ও ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কাফরুল থানায় মতিউর রহমান রকি বাদী হয়ে ডাঃ রাশেদ নিজামের বিরুদ্ধে একটি চুরির মামলা দায়ের করে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে ডাঃ রাশেদ নিজাম টিক সেনপাড়া পর্বতা এলাকার ৩ নম্বর রোডের ১২ নম্বর বাড়ির টিথ টেক ডেন্টালের অফিস খুলে চীন থেকে আমদানি করা ২ কোটি টাকার ডেন্টাল সামগ্রী চুরি করে নিয়ে যায়। 
ডাঃ রাশেদ নিজাম ঢাকায় সপ্তাহে ৪ দিন এবং তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর রামগঞ্জে সপ্তাহে ৩ দিন ডেন্টাল চেম্বারে চিকিৎসা সেবা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যার পর নোয়াখালীর রামগঞ্জে রামগঞ্জ টাওয়ারে ‘রাশেদ ডেন্টাল কেয়ার’ এ রোগী দেখাকালীন কাফরুল থানার এস আই শরীফুজ্জামান চুরির মামলার আসামী ডাঃ রাশেদ নিজামকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। চার দিন পর তিনি জামিনের মুক্তি পান।

এ ব্যাপারে এসআই শরীফুজ্জামান বলেন, বাদী দায়ের করা মামলায় ব্যবসায়িক চুক্তিনামা ও ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি দিয়েছে। পরবর্তীতে আসামীর মোবাইল ফোনের সিডিআর যাচাই করে দেখা যায় তিনি নোয়াখালীর রামগঞ্জে আত্মগোপন করে আছেন। পরে মিরপুর ডিভিশনের উপকমিশনার ও কাফরুল থানার ওসির নির্দেশে আমি একটি টিম নিয়ে রামগঞ্জ থেকে ডাঃ রাশেদ নিজামকে গ্রেফতার করে ঢাকায় নিয়ে আসি। পরবর্তীতে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এই মামলায় ডাঃ রাশেদ নিজামকে একমাত্র আসামী করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছি। 

ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাত্র দুই মাসে একটি প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি টাকা লগ্নী করা এবং চীন থেকে ২ কোটি টাকার ডেন্টাল সামগ্রী আমদানির বিষয়ে ব্যাংক হিসাব বিবরণী পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শরীফুজ্জামান বলেন, ওই প্রতিষ্ঠান থেকে ২ কোটি টাকার মালামাল চুরি হওয়ার তথ্য আমি সাক্ষ্য প্রমাণে নিশ্চিত হয়েছি। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের হিসাব বিবরণীর কোনো প্রয়োজন নেই। ওই প্রতিষ্ঠানে ৩ কোটি টাকা কিভাবে লগ্নী করা হয়েছে বা ২ কোটি টাকার পণ্য কোথায় থেকে কিনেছে, সেটা মামলার বাদীর ব্যক্তিগত বিষয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসাবে আমি মালামাল চুরি হওয়ার তথ্য পেয়েছি বলেই চার্জশিট দিয়েছি। আর বিবাদীর কোনো অভিযোগ থাকলে তিনি আদালতে চার্জশিটের ওপর নারাজি পিটিশন দিবেন। 

এ ব্যাপারে আসামি ডা. রাশেদ নিজাম বলেন, আমার স্কুল জীবনের দুই বেকার বন্ধুকে কর্মসংস্থানের জন্য আমি নিজের প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেই। গত ১৪-১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে বাংলাদেশ ডেন্টাল ট্রেডার্স এ্যান্ড মার্চেনডাইজ এ্যাসোসিয়েশনের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ওই মেলায় টিথ টেক ডেন্টাল সাপ্লাই প্রতিষ্ঠানের নামে একটি স্টল বরাদ্দ নেই। মেলায় প্রদর্শনের জন্য চীন থেকে প্রায় ১ কোটি টাকার ডেন্টাল সামগ্রী আমদানি করা হয়। মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে ১১ ফেব্রুয়ারি কাঁটাবনে শাহীন প্যালেস নামে ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টের কাছে পাঠানো মালামাল রিকশা ভ্যানে করে মিরপুর সেনপাড়া পর্বতা এলাকার অফিসে নিয়ে যাচ্ছিল। ওই সময় শেরেবাংলানগর থানা এলাকা থেকে রকি ও ইলিয়াছের লোকজন রিকশা ভ্যানচালককে মারপিট করে মালামালগুলো একটি পিকআপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। এর আগেও তারা আমার প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা ডেন্টাল সামগ্রীর হিসাব দিতে গরমিল ধরা পড়ে। এ ঘটনায় এ বছরের জানুয়ারি মাসে রকি ও ইলিয়াসকে আমি চাকরীচ্যুত করি। এরপরই তারা পরিকল্পিতভাবে ভুয়া চুক্তিনামা ও টিথ টেক ডেন্টাল সাপ্লাই প্রতিষ্ঠানের নামের সাথে মিল রেখে টিথ টেক ডেন্টাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কাফরুল থানায় আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা করে।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী মতিউর রহমান রকি বলেন, তিন বছর ধরে চুক্তিনামা ও ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই টিথ টেক ডেন্টাল সাপ্লাই নামের প্রতিষ্ঠান দিয়ে আমরা ডেন্টাল সামগ্রী আমদানির ব্যবসা করি। ব্যবসার শুরু থেকেই রাশেদ নিজাম অনেক টাকার হিসাব দিতেন না। তিনি প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারকে করও দিতেন না। পরে আমরা গত বছর নভেম্বর মাসে তিন বন্ধু মিলে চুক্তিনামা করি। ট্রেড লাইসেন্স নেই। এরপর থেকে রাশেদ আমাদেরকে ব্যবসায় রাখবে না বলে জানিয়ে দেয়। সেখান থেকেই দ্বন্দ্ব। সেনপাড়া পর্বতা এলাকার অফিসের চাবি তিন জনের কাছেই থাকত। রাশেদ নিজেই অফিস থেকে কোটি টাকার ডেন্টাল সামগ্রী পিকআপ ভ্যানে কের নিয়ে গেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও এর প্রমাণ আছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ডেন্টাল ট্রেডার্স এ্যান্ড মার্চেনডাইজ এ্যাসোসিয়েশনের সালিশে রাশেদকে প্রতিষ্ঠানের লাভের অংশ হিসাবে ৬০ লাখ টাকা আমাদের দুই বন্ধুকে দিতে বলে। ওই নির্দেশনা মানেনি বলে ডাঃ রাশেদ নিজামের সদস্য পদ স্থগিত করে দিয়েছে।

ইত্তেফাক/এমএএম