টুর্নামেন্টের নাম ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। আয়োজনের ঝাঁ চকচকে কাঠামো, কোটি কোটি ডলারের প্রাইজমানি, আর ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিশ্বের নামি ক্লাবগুলোর অংশগ্রহণ- সব মিলিয়ে এটি হওয়ার কথা ছিল গোটা বিশ্বের ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক বড় উৎসব। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গ্যালারি ফাঁকা, টিকিট বিক্রি নিয়ে বিতর্ক এবং দিনকে দিন বাড়ছে প্রশ্ন এই টুর্নামেন্ট আদৌ কতটা প্রয়োজনীয়? কিংবা আয়োজক হিসেবে কতটা সফল যুক্তরাষ্ট্র, যারা কি না সামনের বছর ফিফা বিশ্বকাপেরও আয়োজক।
টুর্নামেন্ট শুরুর পর থেকেই কম দর্শক উপস্থিতি চোখে পড়ছে। ব্যতিক্রম শুধু প্রথম দিনের ইন্টার মায়ামি ও আল আহলি ম্যাচ কিংবা প্যারিস সেন্ট জার্মেই বনাম অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের হাই-ভোল্টেজ লড়াই। পিএসজির ম্যাচে ৮০ হাজারের বেশি দর্শক মাঠে এলেও, অধিকাংশ ম্যাচেই গ্যালারির বড় অংশ ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা গেছে, যা আগে কোনো ফিফা টুর্নামেন্টে খুব একটা দেখা যায়নি। গতকাল তো বলা চলে গ্যালারি-শূন্যই একটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় যুক্তরাষ্ট্রের অরল্যান্ডোতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার উলসান এইচডি ও দক্ষিণ আফ্রিকার মামেলোডি সান্ডাউন্সের লড়াই মাঠে গড়াল মাত্র ৩,৪১২ দর্শকের সামনে, যা কি না সর্বনিম্ন দর্শক উপস্থিতি। এর আগে গত পরশু আটলান্টায় লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি ও চেলসির মধ্যকার ম্যাচে ২২ হাজার ৩১৭ দর্শক উপস্থিত ছিলেন, যেখানে স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ছিল ৭১ হাজার।
তবে দর্শকখরা নিয়ে চলা টুর্নামেন্টে সৃষ্টি হওয়া সমালোচনায়ও ফিফার অবস্থান রক্ষণাত্মক। সংস্থাটি জানিয়েছে, পুরো টুর্নামেন্টের ইতিমধ্যে প্রায় ১৫ লাখ টিকিট বিক্রি হয়েছে এবং প্রথম আটটি ম্যাচে ৩ লাখ ৪০ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিল, যা ফিফার মতে, এটি ক্লাব ফুটবলের 'গ্লোবাল আকর্ষণের শক্তিশালী প্রমাণ। তবে বিতর্ক কমেনি। শুরুর আগে থেকেই ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে সমালোচনা ছিল তুঙ্গে। ইউরোপের লিগগুলো ও খেলোয়াড় ইউনিয়নগুলো ফিফার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয় 'পর্যাপ্ত আলোচনা ছাড়াই' সূচি চূড়ান্ত করার অভিযোগে।
এক প্রাক্তন ইংলিশ ফুটবলার ড্যানি মিলস তো এই প্রতিযোগিতাকে সরাসরি 'অপ্রয়োজনীয়' আখ্যা দিয়েছিলেন। সম্প্রতি উইলিয়াম হিল ভেগাসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, 'এটা পুরোপুরি ফিফার বানানো একটা প্রতিযোগিতা, যেটার কোনো সম্মান বা মর্যাদা নেই। বড় ক্লাবের খেলোয়াড়দের কাছে এটা জীবনের কোনো অর্জন নয়। ফিফা শুধু এটি করছে নিজেদের আয় বাড়ানোর জন্য, আর কোনো প্রয়োজনই নেই এই টুর্নামেন্টের। সত্যি বলতে, আমি জানি না আসলে কতজন মানুষ এই ম্যাচগুলো দেখছে, কিন্তু খেলা নিয়ে খুব একটা আগ্রহ আছে বলেও মনে হয় না। এটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় একটি আসর।'