বিশ্বের বিস্ময় মহীয়সী হেলেন কেলার। কিংবদন্তি এই নারী ১৮৮০ সালের ২৭ জুন জন্মগ্রহণ করেন এবং প্রয়াত হন ১৯৬৮ সালের ১ জুন। স্বাভাবিকভাবে জন্মগ্রহণ করলেও মাত্র উনিশ মাস বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টি, বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী হয়ে যান। প্রবল আত্মবিশ্বাস এবং তার শিক্ষয়িত্রী অ্যানস্যুলিভানের মানবিক প্রেরণায় সব নেতিবাচকতার বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়ান তিনি। তার জীবন, কর্ম, স্বপ্ন, সংগ্রাম ও দর্শণকে উপজীব্য করে নাট্য সংগঠন ‘স্বপ্নদল’ মঞ্চে এনেছে মনোড্রামা ‘হেলেন কেলার’। নাটকটি রচনা করেছেন তরুণ নাট্যকার অপূর্ণ কুমার কুণ্ডু এবং নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। এতে একক অভিনয় করেছেন শিল্পী জুয়েনা শবনম। মঞ্চ-আলোর পরিকল্পনা করেছেন ফজলে রাব্বী সুকর্ণ এবং প্রযোজনা ব্যবস্থাপক হিসেবে রয়েছেন শাখাওয়াত শিমূল।
হেলেন কেলারের ১৪৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নাটকটির বিশেষ মঞ্চায়ন হচ্ছে রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে ২৭ জুন সন্ধ্যা ৭টায়। এদিন নাটকটির ৫৭তম মঞ্চায়ন।
‘স্বপ্নদল’ প্রধান এবং নির্দেশক জাহিদ রিপন বলেন, ‘আমার নির্দেশনা জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সৃজন ‘হেলেন কেলার’। এতে ঐতিহ্যবাহী বর্ণনাত্মক বাংলা নাট্যরীতির সঙ্গে সমকালীন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সমান্তরালে কারিগরি সুবিধাদির মেলবন্ধন ঘটিয়ে একটি আধুনিক বাংলা নাট্যরীতির প্রযোজনা নির্মাণের প্রয়াস চালানো হয়েছে, যা অন্য সব মনোড্রামার সাপেক্ষে হেলেন কেলারকে দিয়েছে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য। এতে হেলেন কেলারের নিজ শিক্ষয়িত্রী অ্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষ্যে প্রকাশিত হয় চার্লি চ্যাপলিন, মার্ক টোয়েন, কেনেডি, আইনস্টাইনসহ বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে তার জীবনের সমৃদ্ধির কথা। উন্মোচিত হয় পাশ্চাত্যের হেলেন কেলারের জীবনে প্রাচ্যের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তথা রবীন্দ্রদর্শনের প্রবল প্রভাবের প্রকৃত স্বরূপ। উঠে আসে নারী জাগরণ, মানবতাবাদের পক্ষে এবং যুদ্ধ, ধ্বংস, সহিংসতা, বর্ণবাদ তথা আণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে তার স্পষ্ট অবস্থানের কথা। পাশাপাশি উচ্চকিত হয় ব্যক্তি জীবনের নানা পূর্ণতা ও অপুর্ণতার প্রসঙ্গও। অজস্র প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে প্রকাশিত ও বিকশিত হয়ে মানবকল্যাণে নিবেদিত হতে পারাটাই হয়তো জীবনের চূড়ান্ত সার্থকতা। আর বিরূপ পরিস্থিতিতেও মানুষের কর্তব্য যে হতে পারে কতখানি মহান এসব উচ্চাঙ্গের অনুভবই শেষাবধি প্রধান হয়ে ওঠে হেলেন কেলারের জীবনীনির্ভর এবং গবেষণাগার পদ্ধতিতে নির্মিত ঐতিহ্যের ধারায় আধুনিক বাংলা নাট্যরীতির এ প্রযোজনায়।’
স্বপ্নদলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বাংলা মঞ্চের ‘হেলেন কেলার’খ্যাত অভিনেত্রী জুয়েনা শবনম বলেন, ‘হেলেন কেলার চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ এবং টানা এক ঘণ্টা মঞ্চে একক অভিনয় করতে পারা আমার অভিনয় জীবনের পরম প্রাপ্তি। এ চরিত্রটি ধারণ করার জন্য হেলেন কেলারের জীবনী পাঠ, নানা চলচ্চিত্র দর্শন, ইতিহাস পাঠ, নাট্যকারের রচনা ও নির্দেশকের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অনুধাবন, শরীরিক, মানসিক অনুশীলনসহ দীর্ঘ সাধনার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তবে তার ফলও পাওয়া গেছে। ‘হেলেন কেলার’ দেশ-বিদেশে আমাকে এবং স্বপ্নদলকে অনেক সম্মান এনে দিয়েছে।’
স্বপ্নদলের ‘হেলেন কেলার’ প্রযোজনাটি দেশে নিয়মিত সফল মঞ্চায়নের পাশাপাশি দেশের বাইরে জাপানের টোকিওস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের আমন্ত্রণে এবং ভারতের চারটি আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে মঞ্চায়নের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এছাড়াও দেশের সীমা ছাড়িয়ে প্রযোজনাটি ছয়টি আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে দর্শকনন্দিত সম্প্রচারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও স্মরণীয় গ্রহণীয়তা পেয়েছে। ২০১৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউিট (আইটিআই) আয়োজিত ‘দ্বিতীয় ঢাকা আন্তর্জাতিক মনোড্রামা ফেস্টিভ্যাল’-এ নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়নের পর থেকে প্রতিবছর জুনে হেলেন কেলারের জন্ম ও প্রয়াণ দিবস স্মরণে বিশেষ মঞ্চায়নের আয়োজন করে আসছে ‘স্বপ্নদল’।